Book review

আসমান

পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫১

জমীনের আসমান ও যে এত সুন্দর হবে এটা ভাবতে পারিনি, আমি Latiful Islam Shibli ভাইয়ের আসমান গল্পটির কথা বলছি (যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়)। এবারের বইমেলা থেকে বইটি আমি নিয়েছিলাম, এতো শুধু একটি গল্পই নয়, তার থেকেও অনেক। পুরো জ্ঞানসমৃদ্ধ একটা আলেখ্য যেখানে ধর্মত্বত্ত্ব, প্রেম, ভালবাসা, বাহিরের জগৎ সম্পর্কিত অজানা কথাতে পূর্ণ। এটা পড়তে পড়তে কতবার যে চোখ ভিজেছে তা বলতে পারবনা,মাঝে মাঝে আমি আসমার (নায়িকা) স্থানে নিজেকে চিন্তা করেছি, কত ত্যাগ কত প্রেম তার মাঝে। এমন বই বহুদিন পড়িনি। আশা করি সবার ভাল লাগবে। লেখক সম্পর্কে নতুন করে কি আর বলব? আইয়ুব বাচ্চুর যে গানগুলো শ্রোতাদের মনে আজও বেঁচে আছে তার অনেকগুলোই তার লেখা। অসম্ভব ভাল এই মানুষটি আমার মত অতি সাধারণ এক পাঠকের হাত হতে বইটি নিয়ে নিজেই হাসিমুখে অটোগ্রাফ দিলেন তখন তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে গেল…..

Syeda Zannatul Ferdaws Zannat

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫২

বইয়ের নামঃ আসমান
আমার শৈশব থেকে পছন্দের একজন মানুষ লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই..।

বইয়ের লেখক কে হয়তো নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার মত কিছুই নেই আমার। কেননা লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই শুধু লেখকেই নন লেখকের বাইরেও তাঁর বিশাল পরিচয় রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সুনামধন্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী। তিনি একাধিক নাটক লিখেছেন এবং বাংলাদেশের ৯০ দশকের ব্যান্ড গানের ক্ষেত্রে অন্যতম গীতিকার হিসেবেও পরিচিত।
লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের লেখা ‘আসমান’ বইটি মেলা থেকে ভাইয়ের হাতে থেকে যখন নেই, ঠিক তখনি মনের ভিতরে কি রকম জানি একটা অনুভূতি চলে আসে। এর আগেও আমি লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের ফেসবুক পেজে ‘আসমান’ নিয়ে বিভিন্ন রকমের স্ট্যাডার্স পড়েছি। সত্যি বলতে আমি আমার জীবনে কম বেশি অনেক গল্পের বই পড়েছি কিন্তু আসমানের মত বই আমি আমার জীবনে কখন-ই পড়িনি। আমি আবারও লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বাস্তবমূখী ‘আসমান’ বইটি পড়ে নিজের ভিতরের পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য।

বইটি শেষ হয়েছে প্রায় ৮-১০ দিন হবে লেখকের লেখার প্রতিটি লাইন আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। বইটির মত প্রকাশের ভাষা হয়তো আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে জ্ঞাপন করা সম্ভবপর নয়। বইটি যখন পড়া শুরু করি ১ম, ২য় ও ৩য় পৃষ্ঠা পড়ার পড় ৪র্থ পৃষ্ঠা পড়া শুরু করলাম তখন ভিতর থেকে একটা আগ্রহ জন্ম নেয়া শুরু করে পরবর্তী পৃষ্ঠার প্রতি এই ভাবে পর্যাক্রমে একের পর এক পৃষ্ঠা পড়তে থাকি আর আসমানের গভীরে প্রবেশ করতে থাকি। আমি উপলদ্ধি করতে পেরেছি। ধর্মের পথ অবলম্বন করে সৃষ্টার প্রতি প্রেম নিবেদন করাই হচ্ছে আসল প্রেম।

Roknur Zaman Ripon

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৩

বটগাছের নিচে থেকে ফ্রন্ট লাইনে
ami kokhono book rivew likhe ni
but aita sir ar jonno !

boi ta shotti e oshadharon + khub koster
সবার জীবনে মাওলানা ইসহাক এর মতো একজন ইমাম থাকলে ভালোই হতো
& ata porar por thake ami amr life styl chng korar try kortasi
ধন্যবাদ এমন একটি বই আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য

Jina Parker

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৪

‘আমার মনে অশান্তির আগুন জ্বলে, কি করবো?’

‘ওজু করো। আগুন তো পানিতেই নেভে, নাকি?’

ইমাম ইসহাকের এমন সব মজাদার সহজ কিন্তু অর্থপূর্ণ কথা আকৃষ্ট করতো ওমারকে।

ওমার রিজওয়ান। নব্বইয়ের দশকে যখন বাংলাদেশে রক এবং ব্যান্ড সংগীতের জন্য প্রচন্ড উন্মাদনা, তখন রক গায়ক বন্ধু রুশোর সাথে ঢাকা শহরের পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় উদ্দেশ্যহীন ছেলেটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্র ওমার, কিন্তু প্রেমিকার অপ্রত্যাশিত প্রতারণায় বেঁচে থাকার সব রঙ হারিয়ে বসেছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেও পারেনি, এখন রুশোর সঙ্গে এখানে সেখানে ঘুরে, গাঁজা – ফেন্সিডিল খেয়ে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে।

শান্তি খুঁজে পেলো বৃদ্ধ ইমাম ইসহাকের বন্ধুত্বে। সাধারণ হুজুরদের মতো জাহান্নামের ভয় বা জান্নাতের লোভ দেখান না তিনি ওমারকে। তিনি বলেন যুক্তির কথা, দর্শন আর জীবনের লক্ষ্যের কথা, হৃদয়ের শূন্যতার কথা। তাঁর কথা শুনতে শুনতেই ওমার অনুভব করে নিজের অন্তরের পরিবর্তন। রুশোর জীবনাদর্শ পিছে ফেলে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে শান্তি খুঁজে পায়।

তাবলিগ জামাতের সাথে পাকিস্তানের রাইওয়াইন্ডে আসে ওমার। বিভিন্ন দেশের ২০ লাখ মুসলিমের সম্মেলনে পরিচয় ঘটলো তালিবান নেতার পুত্র খালিদ বিন হিশাম এর সাথে। আফগান তালিবানরা তখন নিজেদের ভূমিতে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরূদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। কাবুল এবং বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিজমের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে, তা হটিয়ে একটি প্রকৃত ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য খালিদ এবং আরো অনেকে যুদ্ধ করছে।

খালিদের চিন্তার স্বচ্ছতা এবং লক্ষ্যের দৃঢ়তা ওমারকে স্পর্শ করলো৷ বিশ্বাস রক্ষার জিহাদে পাড়ি দিলো আফগানিস্তানে। ট্রেনিং-এর পর বারগামে সশস্ত্র যুদ্ধের সময় ধাক্কা খেলো ওমার। যাদের আক্রমণ করেছে তারাও যে কালিমাই পড়ছে!

যুদ্ধে আহত ওমার আশ্রয় নিলো খালেদের বাড়িতে। সেখানে খুঁজে পেল স্রষ্টার পক্ষ থেকে তার জন্য নির্ধারিত ভালোবাসা আসমাকে, বিয়ে করলো। যুদ্ধে ফিরলো না আর ওমার, নিজ মুসলিম ভাইদের উপর অস্ত্র ধরতে মন চাইলো না।

কিন্তু ১/১১ এর হামলার পর আমেরিকা শুরু করলো আফগান জনপদকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার অভিযান। আবারো সব হারালো ওমার, নিরপরাধ হওয়া স্বত্বেও স্থান হলো কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে।

আলোর মুখ দেখেনি ওমার ১২ বছর হলো। নিজের দেশেও পরিচিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে। স্ত্রী আসমার সাথে কি আর দেখা হবে? জীবনের উত্থান-পতন, তবু বিশ্বাস না হারানোর গল্প ‘আসমান’।

পাঠপ্রতিক্রিয়া: কিছু বই অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত আমূল নাড়িয়ে দিয়ে যায়। আসমান উপন্যাসটি তেমনই। এটা শুধু ওমারের কাহিনি নয়, আমাদের গতানুগতিক যে ধর্মীয় চিন্তাধারা, তার থেকে এক কদম বেশি ভাবতে শেখাবে গল্পটা।

ধর্মকে যারা প্রশ্ন করতে চান, বা যারা ধর্ম নিয়ে খুব বেশি ভাবেন না, সবার জন্যই ওমার চরিত্রটি। ওমারের মতই আমাদের অনেকেরই জীবনে ভুল আছে, হৃদয়ের ব্যাথা আছে, ফিরে আসার গল্প আছে। ওমার তাই কেবল গল্পের চরিত্র নয়, ভীষণ বাস্তব।

ইমাম ইসহাকের যুক্তিবাদী চরিত্রটি মুগ্ধ করার মতো। দিকভ্রান্ত এক তরুন, যে মানবীর প্রেমে এতোটাই বুঁদ ছিলো যে সেই প্রেম হারিয়ে তার জীবন উদ্দেশ্য হারালো, তাকে তিনি জানালেন হৃদয়ে আল্লাহর প্রেমকে স্থান দিলেই কেবল জাগতিক সব অশান্তি থেকে মুক্তি ঘটে। এখনকার তরুনদের মধ্যে যে অস্থিরতা তার সমাধানের সহজ ব্যাখা দিয়েছেন লেখক ইমামের বয়ানে। সেই অস্থিরতার স্বরূপ অনেকটা দেখিয়েছেন রুশোর মধ্যে। রুশোর সাথে ওমারের কথোপকথনগুলোতে একজন অবিশ্বাসী আর বিশ্বাসীর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ফুটে উঠেছে।

ইমামের চরিত্রের বিপরীত দিক বলা যায় আনোয়ারকে৷ আনোয়ার পড়ালেখা খুব একটা করেনি৷ তাবলিগ জামাতের সাথে যুক্ত আছে প্রায় দশ বছর, ধর্ম তার কাছে যুক্তির উর্ধ্বে তীব্র বিশ্বাসের জায়গা। আনোয়ার ধর্মের অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করে, কিন্তু যা বিশ্বাস করে সেখানেই তার আন্তরিকতা। আনোয়ারের চরিত্রটা থেকে বোঝা যায়, একজন বিশ্বাসী যদি খুব চিন্তা করতে নাও চায়, তবু ধর্মের প্রতি আন্তরিকতা আর সরলতা তাকে শান্তি এনে দিতে পারে।

তাবলীগ জামাতের যে ভ্রাতৃত্ববোধ আর শৃঙ্খলা সেটাও চিত্রিত করেছেন লেখক। একই সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে রটে যাওয়া কর্মপদ্ধতির ত্রুটিটাও উঠে এসেছে। একজন দূর্বল মুসলমানের জন্য তাবলিগ উপযোগী, কিন্তু বর্তমান আধুনিক তরুনরা যারা প্রশ্ন করতে জানে, বুদ্ধি দিয়ে ভাবে তাদের জন্য তাবলিগের সংস্কারের প্রয়োজন।

যাদের সংস্পর্শে এসে পুরোপুরি ঘুরে গেলো ওমারের জীবন, সেই তালিবানদের জীবন ফুটে উঠেছে গল্পে। খালিদের মাধ্যমে জানা যায় আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস। লেখক বলেছেন জঙ্গিবাদীতার বিরুদ্ধে, নিরপরাধ মানুষকে অকারণে হত্যার বিপক্ষে। ইসলামে জিহাদেরও অবস্থান ব্যাখা করেছেন লেখক, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের স্বপক্ষে দাঁড়ানোর নাম জেহাদ।’

আধুনিক বিশ্বে ইসলামের বিভিন্ন সংগঠনের ইতিহাস উঠে এসেছে গল্পে। তাবলিগ জামাত, তালিবান, আল কায়েদা এদের কথা এসেছে, এসেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, টুইন টাওয়ার হামলা ও তার ফলশ্রুতিতে অকারণ গণহত্যা। গুয়ানতানামো বে’র নৃশংসতা আর নিরপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার এর গল্প আছে, বন্দীদের নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির উপরও আলোকপাত করা হয়েছে।

লেখকের কঠিন দর্শনের কথা সহজভাবে বোঝানোর মুন্সিয়ানা প্রশংসা করার মতো। উপন্যাসের শুরুর দিকে রক নিয়ে আলোচনা আরো সংক্ষিপ্ত করলে ভালো হত। বিভিন্ন চরিত্রের মুখে দীর্ঘ সব আলোচনা রয়েছে, যার কারণে অনেকে ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। তবে ধৈর্য ধরে পড়লে অনেক মেসেজ পাওয়া যায়, চিন্তা করার মতো খোরাক আছে। আফগানিস্তানে ট্রেনিং আর যুদ্ধের অংশগুলো উত্তেজনাময়, এখান থেকেই গল্প গতি পাওয়া শুরু করে।

হতাশায় পতিত জীবন থেকে ফিরে আসার, সহজে যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখার, আর মানুষকে, জীবনকে এবং সবকিছুর অগ্রে স্রষ্টাকে ভালোবাসার গল্প আসমান।

সৈয়দা ফাতিমা বানু

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৫

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হতাশা। আমার কাছে যেটা মনে হয় ড্রাগ বা সন্ত্রাস থেকেও ভয়াবহ এই হতাশা নামক রোগের প্রভাব। হতাশা থেকে বাঁচার জন্যই মানুষ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের পথে হাঁটতে শুরু করে। কিছু একটা করে হতাশাটাকে সে ভুলে থাকতে চেষ্টা করে। “ আসমান” লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। লেখক লতিফুল ইসলাস শিবলী ঠিক রোগটাই যেন ধরতে পেরেছেন একদম ঠিক সময়টাতে। উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র ওমার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপিঠে অধ্যয়ন রত এক হতাশা গ্রস্থ মেধাবী কিশোর। প্রিয়তমার দেয়া কষ্ট ভুলে যেতে সে ড্রাগ আর উশৃঙ্খল জীবন যাপন বেছে নিয়েছে। অন্ধকারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এ যেন বর্তমান সময়ের হাজারও কিশোর বা যুবকের একটা সাধারণ গল্প। লেখক এই হাজারও বা লাখো অশান্ত আশ্রয়হীন হৃদয়েয় গতি পথ নির্দেশ করেছেন তার ”আসমান” উপন্যাসে। তিনি ওমার কে দিয়ে বুঝিয়েছেন কে আমি, আমার কি দ্বায়িত্ব, আমাকে কি পেতে হবে, কি ছাড়তে হবে। আমরা জাগতিক যে বিষয় গুলো নিয়ে এত হতাশ আসলেই কি এগুলো আমাদের প্রয়োজন? জবাব মিলবে ”আসমান ’’ এ। আসমান কে তাই একটা উপন্যাস বলতে ইচ্ছুক নই আমি। এটা একটা জীবন দর্শন, হতাশার আশার আলো, কোটি প্রাণের দিক নির্দেশনা। আমারএই লেখা টুকু পড়ে যে কারো ধারনা হতে পারে এটা হয়ত কোন উপদেশ মূলক বোরিং গ্রন্থ। কিন্তু শিক্ষা নেয়ার জন্য যে প্রকৃতি কে শিক্ষক হিসেবে নেয় সে চলতে চলতেই শেখে। তাই আলগা উপদেশ দিয়ে ভারি করা হয়নি একটা পাতাও। উপন্যাস টির প্রথম অংশ বৈচিত্রময় ঢাকা শহরের ওলি গলির অচেনা (চেনা) রূপ তুলে ধরে, আর দ্বিতীয় অংশে আফগান যুদ্ধের মাঠে নিয়ে যাবে সরাসরি ফ্রন্ট লাইনে। লেখকের প্রবল ইতিহাস জ্ঞান এই পৃথিবীর পরিক্রমার সাথে সাথে ওমার কিভাবে তার জীবন কে বৈশয়িক করে তোলে তার গল্প তুলে ধরেছেন পাতায় পাতায়। ভৌগলিক অবস্থার পাশা পাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের নানা বৈচিত্র উপন্যাসটিকে দিয়েছে আলাদা এক মাত্রা। ”আসমান” পড়ে আমি নতুন করে কিছু বিষয় কে জানতে পেরেছি প্রেম, ক্ষমতা, অস্ত্র, ড্রাগ, আমার নিজের পরিচয় এগুলোর আমার জানার বাইরেও অনেক অর্থ আছে। ’’আসমান” সম্পর্কে আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এটা কি ধরনের উপন্যাস? এক কথায় আমি উত্তর দিতে পারব না। কারন এখানে আছে থ্রিল, আছে রোমাঞ্চ, আছে রোম হর্ষক ভ্রমন কাহিনী, আছে সদুপদেশ। তাই আমি বলব এটা উপন্যাসের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে অথবা উপন্যাসের পরিধিকে করেছে আরও বিস্তৃত। লেখকের জন্য শুভ কামনা রইল, শুভকামনা রইল যারা এই অসাধারন বইটার সাথে যে কোনভাবে জড়িত ছিলেন, শুভকামনা তাঁর জন্য যিনি আসমানের নামকরণ যে দৃশ্যে ফুটে উঠেছে ঠিক সেই দৃশ্যটিকে প্রচ্ছদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, সর্বপরি শুভকামনা নালন্দা প্রকাশনী কে এমন একটা উপন্যাস কে বাস্তবে রূপদান করে বাজারে আনার জন্য। কষ্টকরে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

Shuvo Ahmed

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৬

আমি কখনো কোন রিভিউ লিখিনি!!
খালি বই পড়েই নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছি, আসলে কিছু বই আছে সেগুলো পড়ে নিজেকে সহজে মুক্ত করা যায় না,
তেমনি একটা গল্পের বই আসমান,
যে বই পড়ে আমি নিজেকে গল্পের বাইরে আনতে পারিনি সহজে!!
খুবই কষ্ট হয়েছে আমার গল্পের বাইরে আসতে।।

সত্যি বলতে আমি আমার এই ছোট্ট জীবনে কম বেশি অনেক গল্পের বই পড়েছি কিন্তু আসমানের মত বই আমি আমার এই ছোট্ট জীবনে কখন-ই পড়িনি!! বইটি পড়ে শেষ করতে আমার সময় লেগেছে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ দিন !! এর ভিতরে বই পড়ে শেষ করেছি মাত্র তিন দিনে!!

তবে Latiful Islam Shibli ভাইয়া ? এটাকি আসলেই গল্প নাকি সত্যিকারের জীবনের গল্প??

Md R K Gazi

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৭

একটি উপন্যাসও যে পাঠকের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, চিন্তা চেতনাকে কতটা বদলে ফেলতে পারে সেটা আসমান না পড়লে আমি বিশ্বাস করতাম না। আসমান এর থিম ছিল – যে গল্প জীবনের চাইতে বড়। আসলেই উপন্যাসের গল্পটি জীবনের চাইতে বড়।

জীবন ঘনিষ্ট এ গল্পটিতে লেখকের মুন্সীয়ানা দারুণ ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, শুধু শুধু কল্পনার ডানায় ভর করে লেখক কোন আজগুবি কাহিনী এখানে জায়গা দেননি। তারুণ্যদিপ্ত চোখে রঙিন দিনগুলো শেষে যখন পাওয়া না পাওয়ার ব্যর্থতা আমাদের গ্রাস করে, তখন সেখান থেকে উত্তরনের কোন রাস্তা খুজে পাওয়া যায়না, আসমানে লেখক উত্তরনের এরকমই একটি রাস্তার সন্ধান দিয়েছেন।

এখানে কি নেই রোমাঞ্চ, প্রেম, বিরহ,ব্যর্থতা, উৎসাহ,জীবনের প্রতি মমতা, ঘুরে দাড়ানো, আছে এক বাগানসম উপমার ফুল। সেখানেরই একটি উপমা – পৃথিবী বিচ্ছেদের স্থান, মিলনের স্থান জান্নাত, আমাকে মুগ্ধ করেছে।

পৃথিবীর প্রান্তরে বন্দরে ঘুরে বেড়ানো অভিজ্ঞতা শিবলী ভাই দারুনভাবে চিত্রিত করেছেন। তাই পাঠক বিরক্ত হবেননা। আমার পড়া যে দু একটি উপন্যাস আমার হৃদয় কেড়েছে তার মধ্যে আসমান অন্যতম। কারন শব্দের গাঁথুনি অত কঠিন নয় আবার নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে অতুলনীয়।

সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের একটি গল্প নিয়ে Latiful Islam Shibli ভাই আসমান চিত্রিত করেছেন। এক আশাহত তরুন কিভাবে ইমাম সাহেবের ছোয়ায় এক বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হয় তা দেখিয়েছেন। প্রেম, বিরহ, ইসলাম, নামায, আযানের এক দারুন কম্বিনেশন ঘটিয়েছেন আসমানে, আমি সত্যি অভিভূত মুগ্ধ, এই উপন্যাসটি বর্তমান তরুন প্রজন্মকে দেখাবে আশার আলো।

খারাপ লেগেছে রুশো এবং ইমাম সাহেব সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি কারন লেখক নায়ককে নিয়ে গেছেন ঢাকা থেকে কাবুল হয়ে গুয়েতেমালা বে কারাগারে সেখান থেকে স্থায়ীভাবে বার্বাডোস, আর দেশে ফিরে নি ওমর,কারন সে আর ফিরতে পারেনি। একটি পৃষ্ঠা পড়ার পর আরেকটি পৃষ্ঠা পড়ার তীব্র আকুতি পাঠক কে আসমানে উড়াবে।

Faisal Rehan

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৮

যখনই ডিপ্রেশনে পড়ি তখনই আসমান পড়ি!!

Shunno Megh

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫৯

Jahida Shumi

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬০

দুঃখ কষ্টের ভার কি সত্যিই অন্য কেউ বহন করতে পারে? মানুষের ভেতরের কষ্টটা অপার্থিব, আত্মিক, আধ্যাত্মিক। তবুও কেউ যদি তার কষ্টের সময়ে চলার পথে একজন আত্মিক শক্তিপূর্ণ বন্ধু বা চলার সাথী পায় তবে খুব দ্রুত তার কষ্ট শেষ হয়ে যায়। ওমারের মা ওমারের কষ্ট দেখে তেমনি একজন আত্মিক শক্তিপূর্ণ মানুষ মসজিদের ইমাম সাহেবকে তার বন্ধু করে নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

ওমার লামিয়াকে ভালোবেসে ভেবেছিল তার জীবনের শেষ গন্তব্য এই মেয়েটাই। নিশ্চিত একটা পাওয়াকে হঠাৎ হারিয়ে ওমার হয়ে ওঠে দিশাহারা। সেই অবস্থায় এগিয়ে এসেছিল তার বন্ধু জীম মরিসনের ভক্ত রুশো। রুশো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল তার মিউজিক, ফিলোসোফি, ড্রাগস, তত্ত্বকথা, অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে ওমারের কষ্ট ভুলিয়ে রাখতে। কিন্তু ওমার তার কষ্টের দরজা রুশোর কাছে কোনভাবেই খুলতে পারেনি। যেভাবে পেরেছে ইমাম সাহেবের কাছে।

ইমাম সাহেব তাকে বুঝিয়েছেন “পারপাস অফ লাইফ”। তিনি শিখিয়েছেন প্রকৃত ভালবাসার স্বরূপ কি। ইমাম সাহেব তাকে কখনো জান্নাতের লোভ বা জাহান্নামের ভয় দেখেননি। ওমার তার কাছেই জেনেছে ধর্ম শুধুই ধর্ম নয় ধর্ম হল আইডোলজি। এই আইডোলজি দ্বারা ব্যক্তি শুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে হতে পারে শুদ্ধ সমাজ, সমাজ থেকে শুদ্ধ রাষ্ট্র।

মসজিদেই তাবলীগ দলের সাথে ওমারের সাক্ষাৎ হয়। তাদের কনসেপ্ট ও বিশ্বাস থাকে কনভিন্স না করতে পারলেও তাদের ভাতৃত্ববোধ তাকে মুগ্ধ করেছিল। ওমার সে দলের সাথে পাকিস্তানের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে রাজি হয় চোখ খুলে পৃথিবী দেখার আশায়। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম ভাইদের তাঁবুতে ঘুরে ঘুরে তাদের ভাতৃত্ববোধ দেখে আমার ভীষণ মুগ্ধ হয়। ওমার হঠাৎ আকৃষ্ট হয় আফগান তালিবান সৈন্য খালিদ ইবনে হিশাম এর বক্তৃতায়। খালিদের কথায় ওমার বুঝতে পেরেছিল নাফসের জিহাদের সাথে সাথে সশস্ত্র জিহাদেরও গুরুত্ব আছে। ওমর পাকিস্তান থেকে দেশে না ফিরে প্রাগৈতিহাসিক খাইবার পাস পাড়ি দিয়ে হিন্দুকুশের পাদদেশে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় যুদ্ধ থামানোর যুদ্ধে অংশ নিতে। ।

সেখানে ট্রেনিং শেষে প্রথম অপারেশনে উত্তর জোটের বিরুদ্ধে তালেবানের দুঃসাহসী অভিযানে উমার গুরুতর আহত হয়। একেবারে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় সে। কিন্তু ওমার এই বাগড়ামের যুদ্ধে দেখেছিল তালেবান ও উত্তর জোটের উভয়ই আল্লাহু আকবার বলে ঝাপিয়ে পরে। এটা ওমরকে গভীরভাবে ভাবিয়েছিল। মুসলিম হয়ে, একে অপরের ভাই হয়ে ভাই হত্যা ওমরের মন সায় দেয়নি। মারাত্মকভাবে আহত হওয়া ওমরের সেবা-শুশ্রূষার প্রয়োজনে খালিদ ওমারকে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করা খালিদের বোন আসমার নার্সিংয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে ওমর।

ইমাম সাহেব ওমারকে বলেছিলেন “হৃদয় আল্লাহর ঘর”। ওমর সেই হৃদয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করাতে চায়নি। কিন্তু সেই হৃদয় আরো একজন দখল নিয়েছে সে হলো আসমা। তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছিল তাদের হৃদয় একে অপরের বাস। তারা নিজেদের ভাগ্যকে তুলে দিয়েছিল মহান সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তের উপর।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার জের ধরে আমেরিকানরা হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য উত্তর জোটের সাথে মিলে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। এই যুদ্ধ ওমারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তকদিরে বিশ্বাসী ওমারকে তকদির টেনে নিয়ে যায় আমেরিকার কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে জেলে।
আসমা বলেছিল উমার পাখি হয়ে উড়ে গেলে সে আসমান হয়ে যাবে। কিন্তু বন্দী ওমার আজ আসমার থেকে দূরে বহুদূরে। ওমার জানে না তার আসমান কোথায় আছে, কিভাবে আছে?

চেনাজানা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, খুলে যায় একটা অচেনা দরজা। জীবন বন্দী হয়ে গেলে সেটা জীবনকেও ছাপিয়ে যায়। সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়।

#নিজস্ব_মতামতঃ যে গল্পের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য সে গল্পকে আসমান উপন্যাসে তুলে ধরেছেন লেখক তার কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে। এই গল্প যতটা ছিল ওমারের, ততটাই ছিল ইসলামের, ততটাই ছিল আফগানিস্তানের।

গল্পের প্লটটাও দারুন ছিল। লেখকের রচনা শৈলীতে সেটা যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। লেখকের চমৎকার বর্ণনাশৈলিতে মন্ত্রমুগ্ধের মত টানা বইটি পড়ে শেষ করেছি। সহজ সাবলীল ভাষায়, নিপুণ বর্ণনায় ও অপুর্ব শব্দ চয়নে রচনাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। উপন‍্যাসের চরিত্র চিত্রায়নে লেখক বেশ দক্ষতা দেখিয়েছেন। ইমাম সাহেবের ধর্মীয়, আধ‍্যাত্মিক জ্ঞান পাঠককে মুগ্ধ করবে। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে ওমারকে লেখক সার্থকভাবে রূপায়ণ করেছেন। সততা, সত‍্যের উপলব্ধি, আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ইত‍্যাদি গুণাবলীতে লেখক ওমার চরিত্রে তুলে ধরেছেন। উপন‍্যাসের নায়িকা আসমার চরিত্রে মমতা, দৃঢ়তা, ধৈর্যশীলতার দিকগুলো ফুটে উঠেছে। উপন‍্যাসের পার্শ্বচরিত্র গুলোও লেখক সার্থকভাবে রূপায়ণ করেছেন।

বইটি পড়া শেষে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেটা ছিল আমি আজকের বারের নাম ভুলে গিয়েছিলাম। মাথায় ঘুরছিল আফগানিস্তান, ওমার, ইমাম সাহেবের বলা সুন্দর কথাগুলি। ইমাম সাহেবের কথাগুলো যেন হৃদয় জুড়ে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দিয়েছে।

পড়ার মাঝে একবার গেলাম গুগল মামার কাছে আফগান যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সেভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ, আমেরিকান হামলা ইত্যাদি আরেকটু বিস্তারিত জানার জন্য। বইটি পড়তে পড়তেই আমি ঠিক করে নিয়েছি ভাববাদ এবং ইসলাম সম্পর্কে বিস্তর পড়াশোনা শুরু করবো এখন থেকে।

#বই থেকে কিছু পছন্দের বাক্যঃ

১. মহাবিশ্বের এই বিশালতার মাঝে কত ক্ষুদ্র এই মানব জীবন। মানুষ যত বেশি বিশালতার জ্ঞান লাভ করছে তো তুই নিজের ক্ষুদ্রতা টের পাচ্ছে।

২. জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে যত বেশী বস্তু তোমার হৃদয়ে জায়গা করে নেবে ততো বেশি তুমি বিচ্ছেদের বেদনা ভোগ করবে।

৩. ভোগ যখন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে তখন সেও তেমন পশুতে পরিণত হয়। মানুষ তখনই শ্রেষ্ঠ যখন সে ভোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর না পারলে সে একটা সাধারন প্রাণী ছাড়া কিছুই নয়।

#বইমেলা থেকে সংগৃহীত বইগুলোর মধ্যে পড়ার জন্য লেখকের বইগুলো রেখেছিলাম শেষের দিকে। মনে হয়েছিল ভালো কিছু পাবো যা প্রশান্তির সাথে শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্টটাও যুক্ত করবে। সত্যিই তাই। লেখকেরর আরো একটা বই আছে সংগ্রহে “দখল”। বাকিগুলোও পড়তে চাই।

Taslima Islam

Article link


Related posts