Book review

রাখাল

সত্যের জন্য বাঁচো, সত্যের জন্য মরো

উপন্যাস

লেখক: লতিফুল ইসলাম শিবলী

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২০

সতীদাহের চিতা থেকে পালিয়ে যাওয়া এক নারীর মর্মন্তদ কাহিনী – রাখাল।
যাকে তার পরিবারের লোকেরা যে কোন মূল্যে আবার চিতায় তুলতে চায় ।
জীবন বাঁচাতে মেয়েটি পালিয়ে থাকে সুউচ্চ পাহাড়ের খাঁজে, ঈগলের বাসায় ।
সেখান থেকে সে দেখে ফেলে এক অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীকে।
তাকে লুকিয়ে রাখে যে মুসলিম রাখাল, তার দিকে তাকিয়ে হিন্দু মেয়েটির মনে হয়েছিল, এ রাখাল নয়, রাখালের ছদ্মবেশে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ।
আশ্চর্যজনক ভাবে দুই বিশ্বাসের দুটি মানুষের প্রেমানুভূতি মিলেছে এক মহান ঐশী আধ্যাত্মবাদে ।
ঘটনাটা যখন ঘটছে, ভারতবর্ষ তখন মহর্ষি রাজা রামমোহন রায়ের হিন্দুধর্ম সংস্কার আন্দোলনে টালমাটাল । বর্ণবাদী হিন্দুরা নৃশংস সতীদাহ প্রথাকে যেকোন মূল্যে বহাল রাখতে চায় ।
মেয়েটিকে ধরে এনে আবার তোলা হয়েছিলো চিতায় ………
গল্পটি ভারতবর্ষের সর্বশেষ সতীর জীবনের গল্প ।
এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, শুধু কিছু কিছু চরিত্র কাল্পনিক ।

BUY THIS BOOK FROM ROKOMARi

 

পাঠক প্রতিক্রিয়া


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৫

পরিচয় দিলে শিবলী ভাইকে চিনবেননা এমন লোক বাংলাদেশে বোধহয় খুব বেশি খুজে পাওয়া যাবেনা বিশেষ করে যুবক এবং তরুণ সমাজে। একটি মাত্র গানই তার পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। আইয়ুব বাচ্চুর সেই কালজয়ী গান “হাসতে দেখো গাইতে দেখো ” এর রচয়িতা আমাদের প্রিয় শিবলী ভাই।

read more...

উনি যে উপন্যাস লেখেন সেটা আমার জানাই ছিলনা। যাইহোক ওনার “আসমান” বইটি পড়ে রীতিমতো ওনার ভক্ত হয়ে গেলাম। গভীর অপেক্ষা ছিল পরবর্তী বই “রাখাল” এর জন্য। আলহামদুলিল্লাহ পড়ে শেষ করলাম একবার নয় দুইবার।

আমার মতো নাদান মুর্খ পাঠকের শিবলী ভাইয়ের লেখা নিয়ে কিছু বলা ধৃষ্টতার শামিল, আর সেই সাহসও আমার নেই কিন্তু যেহেতু শিবলী ভাইকে ভালোবাসি অনেক সেখান থেকেই একটা অধিকার নিজের অবচেতন মন নিজে নিজেই তৈরী করে নেয়।

অনেক ভালোবাসা এবং আশঙ্কা নিয়ে “রাখাল ” পড়া শুরু করলাম। আগেই বলেছি ভালোবাসা তৈরির কারখানা ছিল আসমান আর আশঙ্কা এজন্য যে শিবলী ভাই কি পারবেন সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে? অনেক বইতো পড়লাম কিন্তু দেখেছি অনেক বিখ্যাত লেখকও প্রকাশকের চাহিদার কারণে তার পাঠকের জন্য বস্তাপচা বই উপহার দিয়েছে। কিন্তু শিবলী ভাই সেদিক থেকে ১০০ভাগ সফল বলতে হবে। ওনার কাছে আমাদের যে আকাশচুম্বী চাওয়া সেটা শিবলী ভাই খুব ভালোভাবেই ওনার ভিতরে ধারন করেছেন বইটি লিখার সময় সেটা আমার বিশ্বাস। এই বই লিখতে গিয়ে ওনার যে পরিশ্রম এবং পড়াশোনা করতে হয়েছে তার প্রমাণ বইয়ের প্রতিটি পরতে পরতে।

বইটির প্রশংসা একবাক্যে সবাই করবেন এবং করেছেন তাই এটি নিয়ে আমি বেশী সময় নষ্ট করতে চাইনা। তখনকার সময় কাল সর্বোপরি তখনকার সামাজিক অবস্থা উনি ধারন করেছেন অতি বিচক্ষণতায়, পাঠক মাত্রই সেখানে হারিয়ে যেতে বাধ্য। অসংখ্য কথার মালা উনি সাজিয়েছেন যেগুলো মনে দাগ কাটতে বাধ্য।
# এ তো অনেক পুন্যের কাজ। একটু জালা সহ্য করতে পারলেই অনন্ত সর্গ।
# জঙ্গল সাহসিকে সমীহ করে আর দুর্বলকে খেয়ে ফেলে………..জঙ্গলে বাচতে হলে জঙ্লী হতে হয়।
# মানুষ কেন পাঠশালায় যায়! জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষের উচিৎ জঙ্গলের কাছে যাওয়া।
# ভোগীর জন্য ম্রিত্যু ভয়ের, ত্যাগীর জন্য নয়।
# যে ব্যাক্তি আল্লাহকে ভয় পায়, সেই ব্যাক্তিকে মানব দানব হিংস্র জানোয়ার সবাই ভয় পায়। আর যে আল্লাহ কে ভয় পায়না সে সবকিছুকে ভয় পায়।
এরকম আরও কত কথার মালা যা বলে শেষ করা যাবেনা, জানতে হলে পড়তে হবে রাখাল।

অসংখ্য ভালোবাসার ভিরে কিছু অনুযোগও জানাতে চাই, জানিনা শিবলী ভাই কিছু মনে করবেন কিনা? তবে আমার ভুলত্রুটি গুলো খমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি।
সবচেয়ে বড় অনুযোগ হলো এতো আকর্ষণীয় একটি বই মাত্র ১৪০ পৃষ্ঠায় শেষ, মনেহলো যেন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল।তবে যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে আর কলেবর বৃদ্ধি করার উপায় ছিলোনা।
তবে ভুমিকা আরেকটু দীর্ঘ করা যেত বলে মনেহয়। আমার মনেহয় শিবলী ভাই নিজেই তাড়াহুড়া করেছেন মূল কাহিনীতে প্রবেশ করার জন্য, উপন্যাস আসলে জমে উঠেছে ৪২ পৃষ্ঠা থেকেই।
তারপরও রাখালকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে তার জন্য আরও বেশী ভুমিকার প্রয়োজন ছিলো। রাখালের বাবার জবানিতে যেসব উচ্চতর কথা গুলো এসেছে এগুলো কিছুটা বেমানান লেগেছে ভুমিকার অপ্রতুলতায় যেমন; তুমি যে কাজটি করছো এটা যেন তেন কাজ নয়। সম্মানিত প্রত্যেক নবী রাসুল জীবনের কোন না কোন সময় রাখাল ছিলেন …..
# ম্রিত্যু হয় মানুষের। আমরা তার জন্য আরবীতে দোয়া করি। দোয়া করার সময় পার্থক্য করিনা হিন্দু না মুসলিম…….
# এখনও কেন আপনার মানুষকে ভয় পেতে হবে? আপনি কি বুঝতে পারছেন না এক মহাশকতি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করছেন?…………. আপনাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছেন এমন এক মহাশকতি যার কাছে সব কিছু তুচ্ছ ……..
# পার্থিব ভালোবাসা তোমাকে সরগের সুখ দেবে ঠিকই কিন্তু তোমাকে হত্যা করার সুযোগ পেলে নরকের যন্ত্রনা দিয়েই সেটা করবে।
এইসব কথার মরম উপলব্ধি করা আজকাল আধুনিক মানুষের পক্ষেও এতো সহজ নয় কিন্তু জঙ্গলে বসবাস করা এক রাখালের এই উপল‌দ্ধির জন্য তার বাল্য কৈশোর থেকে কিছু অবতারণা প্রয়োজন ছিলো
রাখালের পরিচয়টা যেভাবে উঠে এসেছে বাহরামের কথায়; “তুমি কেন জঙ্গলে পরে আছো। তোমার কথার ধরন কোন রাখাল তো দুরে থাক কোন সাধারণ জ্ঞানী মানুষের মতোও না”
এজন্যই হয়তোবা রাখাল যখন ঐ বিসাদময় মুহরতে তখনও আমার মনে তেমনভাবে দাগ কাটতে পারলোনা যেটা পেরেছিল “ওমার”। নিজের অজান্তেই ভিজে উঠেছিল চোখের কোন।

পরিশেষে বলবো সব মিলিয়ে একটি মনে রাখার মতো বই রাখাল। বাহরাম জমাদারের একটি কথা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করতে চাই ” কখনো কখনো মানুষের নীতি তার জীবনের চাইতেও দামি হয়”।

শিবলী ভাইয়ের সুস্থ এবং সুন্দর জীবন কামনা করি সেই সাথে দোয়া করি যেন আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিতে পারেন।

read less

Shafiqul Islam

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৪

“মরতে আমার খুব ভয় লাগে”
– মৃত্যু নিয়ে মানুষের আদিম ভয় আর জীবন সায়াহ্নে এসে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে “রাখাল” এর শুরু! ধর্ম, দর্শন, ইতিহাসের মিশেলে এগিয়ে চলে কাহিনী।

read more...

সময়টা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, বাংলার হিন্দুসমাজে নবজাগরণের সবে শুরু। একদিকে চলছে ধর্মান্ধতাকে আঁকড়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর ধর্মসভা প্রচেষ্টা, অন্যদিকে নবজাগ্রত প্রথাবিরোধি ব্রাহ্মসমাজের লড়াই।
উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখা পাবো রামদেব ঘোষাল নামক মৃত্যুপথযাত্রী স্থানীয় জমিদারের। জমিদারের ভাই বাসুদেব ঘোষাল, ক্ষমতাই যার কাছে সত্য। রামদেব ঘোষালের স্ত্রী পূর্বা দেবী, যাকে ঘিরেই গল্প এগিয়ে চলছে। যাকে ক্ষমতার জন্য, ধর্মের অজুহাতে চিতায় তুলতে চায় বাসুদেব, সাহায্যকারী হিসেবে ক্ষমতাশ্রয়ী পোষা পুরোহিত অনিল ভট্ট, সম্মানের লোভে আচ্ছন্ন পূর্বা দেবীর পরিবার। আর কুন্তি নামক পূর্বা দেবীর একান্ত বিশ্বস্ত সহচারিণী।

রামদেব ঘোষালের মৃত্যুর পরেই শুরু হয় টানটান উত্তেজনা, চারিদিকে সাজ সাজ রব, চলে পূর্বা দেবীর সতীদাহের প্রস্তুতি। তারপর…

জীবন বাঁচাতে পূর্বা দেবী পালায় জঙ্গলে, আবিষ্কার করে নতুন অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীকে। এই পৃথিবীর সাথে পূর্বা দেবীকে মেলবন্ধন ঘটানোর নায়কই “রাখাল”।

রাজা রামমোহনের নবজাগণের ঢেউ লেগেছে রামদেবের এলাকায়, মাধব চন্দ্র প্রচেষ্টা শুরু করে সমাজ সংস্কারের। এখন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক বাসুদেব, ধর্মটা তার বর্ম, অনিল ভট্টরা পোষা প্রাণী!

এইদিকে খোঁজ নেই পূর্বা দেবীর! রামদেবের লাশে ধরেছে পঁচন। বাসুদেবে প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে আছে ঠগী সর্দার বাহরাম জমাদারের দিকে। জমিদারি হাতছাড়া, আশ্রয় হারানোর ভয়ে দুইজনের নিষ্ঠুরতার স্বীকার কুন্তি।

বর্বর ঠগীরা ছদ্মবেশে নেমে পড়ে পুরো অঞ্চলে। ফাঁদে আটকে পড়ে রাখাল, ধরা পড়ে পূর্বা দেবী। রাখালের লাশ কাঁধে জঙ্গলের দিকে পুঁততে রওনা হলো দুজন ঠগী…..

দাবানলের মতো পূর্বা দেবীর আগমনের কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে। তার সতী হওয়াটা এখন ‘ধর্মসভার’ জন্য বিরাট বিজয়। আফিম আর ভাং এ আচ্ছন্ন করে তোলা হলো চিতায়। সাদা মেঘের মতো ধোঁয়া পূর্বা দেবীর চিতাটাকে সম্পূর্ণরুপে ঢেকে দিলো। তারপর….

উপন্যাসের সমাপ্তিটা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। ইতিহাসের সাথে ফিকশনের ফিউশনে- রাজা রামমোহন রায়, ইয়াং বেঙ্গল, হাজী শরীয়তউল্ল্যাহ, উইলিয়াম বেন্টিংদের জীবন্ত দেখা পাবেন উপন্যাসের অলিগলিতে, এটাই লেখকের স্বার্থকতা। আর সৌর্ন্দযের ভেতরে লুকানো মায়ায় আটকে পড়া রাখালের বিষাদ যে কাউকে ছুঁতে বাধ্য করবে। সে সবার, আবার কারো না!

read less

Rifat M Alam

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৩

“মরতে আমার খুব ভয় লাগে”
মৃত্যুর চেয়ে শীতল ভয় আর কিছুতেই নেই। যমের গায়ের গন্ধ পাওয়া এক মৃত্যু পদযাত্রীর আকুল এই আকুতি ভয় পাইয়ে দেয় আরো অনেককে।ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় মরতে বসা রামদেব ঘোষালের যুবতী বধু পূর্বা দেবীর।

read more...

উনিশ শতকের বিশের দিকের এই ঘটনার পটভূমিতে দেখা যায়,সমাজের এক শ্রেনীর সুবিধাবাদী ব্রাহ্মণ পুরোহিত ,সমাজপতিরা নারীর উপর চাপিয়ে দেয় সহমরণের মতো এক ভয়ংকর মৃত্যু খেলা।অবাক করা কথা হলো সেই হতভাগ্য নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্যকেউ দেয় না।না বাবা মা,না ভাই বোন।

জীবিতকালে সাত পাকে তৈরী হওয়া বিবাহবন্ধনেরর সম্পর্ক ছিড়ে যায় তিন পাকে ঘোরা সহমরণে।এতেই নারীর পুন্যতা।কিন্তু এই পূর্ণের মাঝে রয়েছে এক ঘৃণ্য মতলব এটা বুজে যায় পূর্বা দেবী।দাসী কুন্তা তাকে জানিয়ে দেয় তার ঠাকুর পো বাসুদেবের মতলব।সেই থেকেই এই দুই নারীর সব রং সব আনন্দ সব আরাম হারিয়ে যায় দুশ্চিন্তার অন্ধকারে। কুন্তা ভেবে পায় না কি করে তার প্রিয় মা ঠাকুরন পূর্বা দেবীকে রক্ষা করবে বাসুদেবের কবল থেকে।কুন্তা ভরসা পায় মুসলিম যুবক রাখালকে।
শুরু হয় অন্য এক উপাখ্যান। সহমরণের চিতা উপেক্ষা করা এক যুবতী ও জংগলের সম্রাট রাখালের পালিয়ে বেড়ানোর এক লোমহর্ষক চিত্র।অন্য পাশে চিরায়ত ধর্মের ন্যাক্কারজনক এই প্রথা পন্থার বিরুদ্ধে জেগে উঠে আরেক যুবক মাধব।ইংরেজ রাজ শক্তি ক্ষমতাসীন তখন।ইংরেজদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে সমাজের শিক্ষিত হিন্দু যুবকদের নিয়ে মাধব গড়ে তুলতে থাকে সহমরণের বিরুদ্ধে এক মহা প্রতিরোধ। এই অন্ধকার প্রথা এইটাই শক্তিশালী এইটাই নির্মম যেখানে নিজের মা বোনকে বলি দেয়াকে ভাবে তারা পূর্ণ্যের কাজ।মাধব পারবে কি এই অন্ধাকারের জাল ছিন্ন করে আলোর প্রভাত আনতে?
রাখাল পারবে কি এত এত শকুনের চোখ ফাকি দিয়ে বেচে থাকার স্বাদ উপভোগ করতে চাওয়া পূর্বা দেবীকে নতুন জীবনের প্রশান্তি দিতে?
তাহলে পড়তে হবে রাখাল।যে রাখাল ফরাজি আন্দোলনে র অংশ নেয়া এক বীরের সন্তান।যার রয়েছে ঈমানের দীক্ষা আর পাথুরে বাহুর হিম্মত!

পাঠ প্রতিক্রিয়া ঃআমার কেনো যেনো মুগ্ধতায় ডুবে থাকা বইগুলোর পাঠ শেষ হয় রাতের দিকে।আর সেই সুবিধা ভোগ করে আমার কল্পনা শক্তি আমার মস্তিষ্ক। তাই শেষ হয়েও হইলো না শেষ এই অনুভব চলতেই থাকে জাগরণে ও ঘুমে।পাঠ প্রতিক্রিয়ায় তেমন কিছু বলার নেই আমার।মরতে ভয় পাওয়া রামদেব ঘোষালের জন্য খানিক মায়া হয়েছিলো এইটুকু মনে আছে।সহমরণের অন্ধকারে পূর্বা দেবীকে যেনো ডুবতে না হয় এই প্রার্থনা টুকুও ছিলো।কুন্তি একটা শিক্ষা।কখনো কখনো মানুষের নীতি তার জীবনের চাইতে দামী হয় এটা কুন্তি বাহরাম জমাদার কে যেমন শিখিয়ে গেছে।আমাকেও ভাবনা দিয়েছে।কুন্তির জন্য খুব শ্রদ্ধাবোধ জেগেছে আমার।বিশ্বাস খুব মজবুত হাতিয়ার বুজিয়ে দিয়েছে কুন্তি।
সবথেকে বেশি আমাকে টেনেছে রাখাল ও পূর্বার নতুন জীবন।নতুন পথ চলা।আমি এমনিতেই বাধনহারা একটা জীবনের কল্পনা করি।যেখানে পাহার নদীর সখ্যতা ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই।এই গল্পের সেই ঈগলের বাসার জন্য আমার কেমন হাহাকার লাগছে।সারারাত মাথায় বুদ হয়ে আটকে ছিলো পাহাড়ের চুড়ায় আকাশের কোলে নীলের শুভেচ্ছায় গড়ে ওঠা ঈগলের বাসা।
শেষের কয়েকটা পাতা আমি এক জটকায় পড়ে ফেলেছি।আমার বুকে দুকদুক ছিলো এত্ত প্রবল, আমি টের পাচ্ছিলাম।রাখালের জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছিলো।ঈগল বাসা বাধলো কিন্তু রাখাল কেনো একটা বাসা বাধতে পারলো না।এই আক্ষেপে আমার ইচ্ছাই হয়নি রাখাল নিয়ে কিছু বলতে।
কিন্তু কি আজীব সকালের ঝকঝকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ে যায় যে জীবন বেড়ে উঠে মুক্তির স্বাদ পেতে পেতে,যে জীবন পাখির আর পাহারের,যে জীবন পেয়ে যায় জংগলের আলিংগন সে জীবন ছোট্ট একটা ঘর বাধার জন্য না।এইতো বেশ রাখাল থাকবে পূর্বা দেবীর কল্পনার রাজ্যে।যে রাজ্য স্বর্গের কাছাকাছি!
যে বাক্যগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে এগুলো বইয়ের কথা না এগুলো জীবনের প্রতিচ্ছবি!
১, ভোগীর জন্য মৃত্যু ভয়ের,ত্যাগীর জন্য নয়(এই বাক্যটা আমার ভাবনায় যোগ করেছে নতুন ভয়!আসলেই কি আমরা ত্যাগের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছি!)

২,আমরা সবসময় নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকি বলে ভগবানের(আল্লাহর)কৃপা দেখতে পাইনা।(এ এক ধ্রুব সত্য কথা।এই সত্যকথাটি রাত থেকে পোড়াচ্ছে।আল্লাহর রহমত থেকে কি করে নিরাস হয়ে যাই বারবার 😢)

৩,একাকিত্ব খুব ভয়ংকর জিনিশ।এটা কাউকে কাউকে মেরে ফেলে।আর কাউকে কাউকে মহান মানুষে পরিণত করে।

৪,পার্থিব ভালোবাসা তোমাকে স্বর্গের সুখ দেবে ঠিকই, কিন্তু তোমাকে হত্যা করার সুযোগ পেলে নরকের যন্ত্রণা দিয়েই সেটা করবে।(খুব ভারী কথা।মাথার ভিতর আর মনের গহীনে আটকে রাখার চেষ্টা করছি)

– ৬,যতক্ষণ তুমি নিজের সৌন্দর্য টের পাওনা ততক্ষণই তুমি সুন্দর। জেনে গেলে অহংকার তোমাকে কুৎসিত করে দেয়।(কি এক বাক্য!!নিজেকে শুধরাবার জন্য এর চেয়ে আর শক্তিমান কি বিজ্ঞ বচন হতে পারে…)
– ৭,সঙ্গী পেলে পাখি বানায় বাসা,মানুষ বানায় ঘর।(উপাখ্যানের শেষ বাক্য।এই শেষ বাক্যে কি ছিলো কি আছে আমি জানিনা। আমার কেবল কান্না পাচ্ছে। একজন নিসঙ্গ মানুষের জীবনে “ঘর “একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম।)
– বিঃদ্রঃ প্রতিটি বই একটি বার্তা বহন করে।সেই বইগুলো ইতিহাস হয়ে রয়ে যায় যেগুলোর প্রতিটি শব্দে বাক্যে যে বার্তা রয়েছে তা যদি পাঠক গ্রহন করে।আমার নিজের যতটুকু ধারনক্ষমতা আছে সেইটুকু দিয়ে আমি বুজেছি শিবলী ভাইয়ের বই মানে জীবনের জন্য খোরাক।এই খোরাক আমার মতো আরো অনেকের প্রয়োজন। রাখাল এক সার্থক মেসেজ!
#আমাকে অটোগ্রাফ সহ দিবে এই ওয়াদা দিয়েই জাবির বুকস রাখাল পাঠালো।কিন্তু আমি নিরাশ হয়েছি।অটোগ্রাফ দেয়া হয়নি।একটু দুখ ছিলো।এখন মনে হচ্ছে অটোগ্রাফ আর চাই না।লেখকের কাছে ঈগলের বাসার ঠিকানাটি চাই ।সেই স্বর্গের ঠিকানা।চোখের সামনে ঝকঝকে নীল আকাশ,উপত্যকার বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাস,অরণ্য, পাহাড় আর শিমুল তুলার মতো পেজা মেঘ,এক অসহ্য সুন্দর পৃথিবীর সামনে দাঁড়িয়ে আমিও বাকরুদ্ধ হয়ে যেতে চাই পূর্বার মতো।
স্বর্গের দরজায় স্বাগতম সব বই পোকাদের।

read less

Marjana Saleh

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১২

যতক্ষণ তুমি নিজের সৌন্দর্য টের পাও না ততক্ষণই তুমি সুন্দর।
জেনে গেলে অহংকার তোমাকে কুৎসিত করে দেয়।

রাখাল, লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের চতুর্থ উপন্যাস (আমার পঠিত)। প্রতি বছর মেলাতে যে কয়েকজন লেখকের বই উইশলিস্টে থাকে, তাদের মাঝে শিবলী ভাই একজন। তাই রিভিউ পুরোপুরি নিরপেক্ষ না-ও হতে পারে।

read more...

ডিসক্লেইমার শেষে কাজের কথায় আসা যাক- রাখাল, সতীদাহ এবং সহমরণ নিয়ে লিখিত বই। মাঝে আছে ঠগি, রাজা রামমোহন রায় ও ব্রাহ্মসমাজ এবং সতীদাহ প্রথা বাতিলের প্রেক্ষাপট। বইটিকে তাই হিস্টোরিকাল ফিকশন বলা যেতে পারে সম্ভবত।
ভাগে ভাগে আলোচনা করা যাক।

প্রথমেই আসব প্লটের প্রসঙ্গে। আমার হিসেবে প্লট দুই ধরনের হতে পারে। একটা হচ্ছে কোনো একটা চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে। অনেকটা ভ্রমণের মতো…মূল চরিত্রের ‘ক’ বিন্দু থেকে ‘খ’ বিন্দুতে যাত্রা। কোনো কোনো গল্পে এই যাত্রাটাই মুখ্য,যেমনটা সামাজিক গল্পে। আবার আরেকটা হতে পারে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লেখা উপন্যাস। মূল চরিত্র ‘খ’ বিন্দুতে পৌঁছতে পারে কিনা, সেটাকে মাথায় রেখে। নিখুঁত বইতে থাকে এই দুটোর সুন্দর মেলবন্ধন। রাখাল তেমনি একটা বই। এতে মূল চরিত্রগুলোর উপলব্ধির পথে যাত্রা যেমন উপভোগ্য, তেমনি ভালো লেগেছে লক্ষ্যটাও। এর বেশ বললে স্পয়লার হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত বিষয়টা হলো চরিত্র-চিত্রণ। আমরা, মানে মানুষ আরকী, সেই চরিত্রের সঙ্গেই একাত্ম হতে পারি, যা আমাদের মনে ধরে…অথবা যার মাঝে আমরা নিজেদেরকে খুঁজে পাই। সম্ভবত এই জন্যই মৌলিক থ্রিলারের মান যেমনই হোক না কেন, ভালো লাগে বেশি অনুবাদের চাইতে। আপনা বলে মনে হয়। ইতিহাসকে সামনে রেখে, সময়ের কাটাকে উল্টো পথে ঘুরিয়ে লেখা উপন্যাসের সঙ্গে একাত্ম হওয়াটা মুশকিল। তাই চরিত্রকে মনে না ধরে উপায় নেই। সম্ভবত বাসুদেব ঘোষাল, পূর্বা দেবী, রাখাল, এমনকী জমাদারকেও মনে ধরবে পাঠকের। আমার একমাত্র আপত্তি সমাপ্তিতে চরিত্রগুলোর ‘অচরিত্রসুলভ’ দুয়েকটা আচরণে।

লেখনশৈলীর কথা বলি এবার। দারবিশ আর আসমান- খুবই ভারি বই। এই বইগুলো আসলে কয়েকবার পড়ার মতো, প্রতিটা লাইন না হলেও অন্তত প্রতিটা অধ্যায় মন দিয়ে না পড়লে অন্তর্নিহিত অর্থ ধরতে পারা কঠিন। এমনকী অনেকক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমার মতো পাঠকের ক্ষেত্রে, যা হয়তো বার দশেক পড়লেও সম্ভব না। সেই তুলনায় এই বইতে এমন জায়গা অনেক কম। আমার মনে হয় এটা পাঠকের জন্য উদ্দীপনার জোগাড় হিসেবে গণ্য হতে পারে। শুধুই থ্রিলার পাঠে অভ্যস্ত পাঠকদের জন্য লেখকের বই যাচাই করার উপযুক্ত একটা নমুনা। তবে আমি খানিকটা অতৃপ্ত-একই ধরনের বাক্যের গঠনে পরপর লাইন আছে বেশি কিছু জায়গায় যা কিছুটা হলেও একঘেয়েমি আনে। সেই সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে দৃষ্টিকটু রকমের আপনি-তুমির গোলমাল। আপনি দিয়ে শুরু করা লাইনের ক্রিয়াপদের শেষে তুমি চলে এলে সেটা চোখে লাগে বটে। আরেকটা প্রশংসা না করলেই না। ধর্মীয় একগুঁয়েমির বশবর্তী হয়ে অনেক লেখকই ভিন্ন ধর্মের কোনো কিছু নিয়ে লেখার সময় একধরনের প্রচ্ছন্ন বা প্রকট উন্নাসিকতা প্রদর্শন করেন, যা সব ধর্মের অনুসারীর মাঝে দেখা যায়। তবে রাখালে আমার তেমনটা মনে হয়নি। যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই লিখেছেন লেখক, নিম্ন রুচির রসিকতা করে খেলো করেননি।

সমাপ্তির কথা বলছিলাম, একটু অতি-নাটকীয় হয়ে গেল। বই তো বেশি বড় না, তাই আরও দশ পাতা সময় নিয়ে শেষ করলেও ক্ষতি ছিল না। ****(স্পয়লার) পূর্বা দেবী যদি সমাজের চোখরাঙ্গানি অপেক্ষা করে পালাতে পারেন, তাহলে কেন মাধবকে বিয়ে করার প্রস্তাব তাকে মেনে নিতে হবে? মাধব চরিত্রটাকে শুরুতেও মনে হয়েছে একটা বখে যাওয়া মানুষ। মাকে গরু রান্না করে দিতে বলার মাঝে সহিষ্ণুতা নেই, আছে আধুনিক যুগের জোর করে সব কিছু চাপিয়ে দেবার আগ্রহ (প্রথাবিরোধী ও প্রথা-সমর্থক, উভয়েই এই দোষে দুষ্ট)। শুধু মাত্র সামাজিক প্রথার বাইরে যাবার জন্য একটা বিয়ে করা কখনওই বইয়ের মেসেজ হতে পারে না (বলছি না যে বইয়ের মেসেজ এটাই)। বরঞ্চ আরও স্বাভাবিক একটা পরিণতি দেখালে ভালো লাগত।****

সব শেষে বইয়ের মেকআপ, গেটাপ, আউটলুক। আদর্শ এক দুনিয়ায় এমন ধারার লেখকের হওয়া উচিত কথা সাহিত্যিক এবং ব্যাকরণবিদ এবং বানান বিশেষজ্ঞ। কিন্তু আমরা আদর্শ দুনিয়াতে নেই। তাই লেখকরা এখানে শখের বসে লেখালেখি করেন। ব্যাকরণবিদ ও বানান বিশেষজ্ঞ হবার চাইতে পেট চালাবার গরজ তাদের বেশি। তাই মনের খেয়ালে লেখেন বই, আর পেটের দায়ে শেখেন কর্মপ্রণালী। এক্ষেত্রে প্রকাশকের ওপর পূর্ণভাবে নির্ভর করা ছাড়া গতি নেই। তাতেও আবার সমস্যা। যদি সম্পাদক ও প্রুফ রিডার বইটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেখেন, তাহলে তাদেরকে সম্মানী দিতে গেলেও বই প্রতি দাম বেড়ে যায় ১০-২০ টাকা। আমরা, পাঠকরা, বিশ টাকা দিয়ে…থাক, চর্বিত চর্বণ। আসল কথা হলো ওই বিশ টাকা বইয়ের পেছনে দিতে আমাদের আপত্তি আছে। যেজন্যই হাই প্রোফাইল লেখকদের দিকে আমাদের চেয়ে থাকতে হয়। পাঁচশ বই ছাপালে যদি প্রতি বইতে ১০ টাকা বেশি রাখতে হয়, পাঁচ হাজার ছাপালে তো সেই অতিরিক্ত খরচটা ১-এ নামে, তাই না? তো যাদের বইয়ের বিক্রি এমন হবে বলে আশা করা যায়, তাদের বইটা কি নিখুঁত হতে পারে না? চাওয়াটা কি খুব বেশি? নিশ্চয়ই না।
প্রথমে দর্শনদারী, তার গুণবিচারি-বর্তমানের প্রথা। তাই বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে প্রথমেই চলে যায় নজর। ওটা ভালো হতে হবে, যেন-তেন হলে চলবে না। বলছি না যে প্রচ্ছদ ভালো করা দোষণীয় কিছু। কিন্তু আমার কাছে প্রচ্ছদ প্রসাধনীর নামান্তর, আর লেখা ভাতের। ভাত না কিনে, প্রসাধনী কিনতে আমি আগ্রহী নই।
যাই হোক, বইয়ের প্রচ্ছদের আইডিয়া সুন্দর। তবে প্রচ্ছদ ততটা না। আসমান আর এটার রঙের ব্যবহার কাছাকাছি, একটু আলাদা হলে ভালো হতো। বাঁধাই মজবুত, কাগজ উন্নতমানের, ছাপা নিখুঁত। শুধু ভেতরে সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং জড়িত প্রমাদ নজরে পড়ে (পঞ্চম সংস্করণে এসেও)।

সুখপাঠ্য একটি বই রাখাল, লেখকের সিগনেচার জীবনবোধের ছোঁয়ার পাশাপাশি আছে পাতা উলটে পড়ে যাবার মতো একটা গল্প। আমার কাছে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্যই পড়ার পরামর্শ দেব।

read less

রুড রিভিউস

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১১

লতিফুল ইসলাম শিবলীর ২০২০ বইমেলার নতুন উপন্যাস ‘রাখাল’। এসেছে নালন্দা থেকে।

উপন্যাসের ফ্ল্যাপ থেকে পাই, এই বইয়ের প্লট সতীদাহ থেকে পালিয়ে আসা এক নারীর কাহিনী। প্লট হিসেবে একেবারেই ভিন্ন, নতুন! লেখক তার নতুন প্লট দিয়ে আরও একবার চমকে দিয়েছেন।

গল্পটা শুরু হয় ‘মরতে আমার খুব ভয় হয়’ বাক্য দিয়ে।

read more...

রূঢ় এক বাস্তবতা এবং মানুষের আদিম ভয় এর স্বীকারোক্তি দিয়ে যে বইয়ের শুরু, সেই বইয়ে দেখানো হয়েছে জীবন মৃত্যুর লড়াই, মানুষের পৈশাচিকতা,ধর্মান্ধতা, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা, ক্ষমতা এবং পয়সার লোভে হায়েনা হয়ে যাওয়া মানুষের গল্প, এসেছে প্রচন্ড নীতিবান এবং অনিয়ম ভাঙা মানুষের গল্পও। সাথে আছে প্রকৃতির এক অনবদ্য এবং প্রাঞ্জল বর্ণনা।

গল্প ঘুরেছে ইতিহাসের পাতায়, বাস্তবতার সাথে কল্পনার মিশেলে।

পুরো গল্পের সার সংক্ষেপ আমি বলছি না। শুধু কিছু চরিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

রামদেব ঘোষাল একজন মৃত্যুপথযাত্রী জমিদার রামদেব ঘোষাল। তার ভাই বাসুদেব ঘোষাল, ভাইয়ের মৃত্যুতে যার লাভ বৈ কোনো লোকসান নেই। বাসুদেব ঘোষালের একরকম পোষা পুরোহিত অনিল ভট্ট। রামদেব ঘোষালের স্ত্রী পূর্বা দেবী, যাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্রের জাল। যাকে সহমরণে পাঠাতে চাওয়া হয় জোর করে, যাকে বলি দিতে চাওয়া হয় সতীদাহ এর মাধ্যমে, যেখানে রাজি ছিল তার বাবা মা-ও, শুধু মাত্র সতীর পিতামাতা হওয়ার সম্মানের লোভে। আর আছে পূর্বা দেবীর একান্ত সহচারিনী হয়ে ওঠা কুন্তি।

এ গেল জমিদারবাড়ির ভেতরের চরিত্র। কাহিনী শুরু হয় তরাই পরগনায়, গিয়ে ঠেকে কলকাতায়।

কলকাতায় তখন ব্রাহ্মসমাজ জেগে উঠছে রাজা রামমোহনের হাত ধরে। এর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ধর্মসভা নামের আরেক গোষ্ঠী। ব্রাহ্মসমাজ চায় ধর্মে যেসকল অপব্যাখ্যা ঢুকেছে, যতো শ্রেণিবিভেদ এসেছে সেসব দূর করতে, দূর করে ফেলতে সব মিথ্যেকে। অপরদিকে ধর্মসভা তাদের পিতৃপ্রদত্ত ধর্মকে আকড়ে ধরে রাখতে চায়, যেকোনো ধরনের সংস্কার পরিপন্থি তারা।

এই সময়েই আমরা পরিচিত হয় মাধব নামের এক যুবকের সাথে, যে ইয়াং বেঙ্গলের সদস্য, ব্রাহ্মধর্মে বিশ্বাসী, রামমোহন রায়ের অনুসারী। সে বিতাড়িত হয় তার ঘর থেকে, এলাকা থেকে। কিন্তু সে তার বিশ্বাস থেকে টলে যায়নি, সে কাজ করে গেছে সংস্কারের। সে দূর করতে চেয়েছে সব অনিয়ম, শ্রেণিবিভেদ।

এসেছে ঠগীদের কাহিনী। ঠগীদের জীবন খুব অল্পে কিন্তু আগ্রহ উদ্দীপকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

এবং এরপরেই আবির্ভাব ঘটে মূল চরিত্রের, যার নামেই উপন্যাসের নাম, রাখাল। যার বাবা ফরায়েজী আন্দোলনের একজন সৈনিক। রাখাল তার বাবার আদর্শে উজ্জীবিত। একজন পরিপূর্ন ধার্মিক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে সাহস করে দাঁড়াতে পারে। যার সময় কাটে ধ্যানে, ইবাদত করে। আল্লাহকে স্মরণ করে যে বেশিরভাগ সময়।

এবার বলি পাঠপ্রতিক্রিয়া-
শিবলী এই বইয়ে তার পুরনো চেহারায় নতুন রূপে হাজির হয়েছেন। প্লটের অভিনবত্ব, প্রাঞ্জল কাহিনী বর্ণনা, প্রকৃতির অসাধারণ চিত্র এবং সেই স্বভাবসুলভ জীবনকে দেখার নতুন দর্শন। একদম নতুন এক আখ্যান তুলে ধরেছেন লেখক, যে আখ্যান আমাদের অনেকে জানা, কিন্তু তিনি চিনিয়েছেন নতুন করে।

পুরো উপন্যাসে আমরা দেখি কিভাবে আদিকাল থেকেই ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং ধর্মকে নিজের মতো বানিয়ে ব্যবহার করা হয়ে উঠেছে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার। কিভাবে অভাবকে পুজি করে পয়সার লোভে বিক্রি হয়ে যায় ধর্মীয় নেতারা। এবং কিভাবে একটা সময় পর গিয়ে আবার ঘটে জাগরণ, যে জাগরণ কে কোনোভাবেই থামিয়ে রাখা যায় না।

শিবলী চিত্রিত করেছেন মানুষের বীভৎস রূপ। কিভাবে জ্যন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে পারে আরেক (অ)মানুষ। আবার কিভাবে নিজের জীবন দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আরেক মানুষ জীবন বাঁচায়। দেখিয়েছেন, মানুষের বীভৎস রূপের কাছে যখন মানুষ অসহায়, মানুষ তখন আশ্রয় খোঁজে প্রকৃতির কোলে, মানুষ তখন নতুন করে খুঁজে পায় তাঁর সৃষ্টিকর্তা কে।

প্রকৃতি বর্ণনা নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। কাঞ্চি নদী, জঙ্গল, পাহাড়, ঈগলের বাসা সব ভাসবে আপনার চোখে, যদি পড়েন। লেখকের প্রকৃতি বর্ণনার মুন্সিয়ানা আপনাকে বিস্মিত করতে পারে!

আর শেষমেশ দেখিয়েছেন, দুনিয়া উল্টেপাল্টে গেলেও সত্য সত্যই, সত্যই বেঁচে থাকে। বাকিরা সব মরে যায়। তাই হয়তো রাখাল বলে, ‘সত্যের জন্য বাঁচো সত্যের জন্য মরো।’

বই থেকে-
শিবলীর বই পড়ছেন আর তাঁর বই থেকে আপনি কোত করার মতো লাইন পাবেন না, এরকম কখনও হয় না কি?

আমার ভালো লেগেছে এমন কিছু বাক্য কোট করলাম নিচে-

‘সত্যমাত্রই অসাম্প্রদায়িক ও উদার।’

‘যতক্ষণ তুমি নিজের সৌন্দর্য টের পাওনা ততক্ষনই তুমি সুন্দর। জেনে গেলে অহংকার তোমাকে কুৎসিত করে দেয়।’

‘মানবাজতির একমাত্র সাধারণ সম্পত্তির নাম সত্য।’

‘জঙ্গলে যে কেউ ঢুকতে পারে, কিন্তু জঙ্গগলের হৃদয়ে সকলে ঢুকতে পারে না।’

‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় পায়, সেই ব্যক্তিকে মানব-দানব হিংস্র জানোয়ার সবাই ভয় পায়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় পায়না সে ব্যক্তি সবকিছুকে ভয় পায়।’

‘পার্থিব ভালোবাসা তোমাকে স্বর্গের সুখ দেবে ঠিকই, কিন্তু তোমাকে হত্যা করার সুযোগ পেলে নরক যন্ত্রণা দিয়েই সেটা করবে।’

‘প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে কোনো ‘আমিত্ব’ নেই, আছে ‘তুমি এবং তোমরা’।’

‘ভাগ্য সহায় থাকলে, রাস্তা যতোই দুর্গম হোক, মানুষ ঠিকই পৌছে যায় সুন্দর গন্তব্যে।’

‘একাকিত্ব খুব ভয়ংকর জিনিস। এটা কাউকে কাউকে মেরে ফেলে। আর কাউকে কাউকে মহান মানুষে পরিণত করে।’

‘সঙ্গী পেলে পাখি বানায় বাসা, মানুষ বানায় ঘর।’

না, আর না, এভাবে লিখতে থাকলে কখন বইটাই ছেপে দেব!

প্রতিক্রিয়া লেখার কথা ছিল, আসলে প্রতিক্রিয়া বোঝানো সম্ভব না। এটা বুঝে নিতে হয়। এই ধরেন বইটা পড়ে আপনার একটা অনুভূতি হবে, সেটা কিভাবে আপনি বোঝাবেন? এতোটুকু বলতে পারি লতিফুল ইসলাম শিবলী আরও একবার সত্যের আশ্রয়ে যে কল্পকাহিনী ফেঁদেছেন তা আমাদের জানা সত্য, চেনা সমাজ কে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

read less

তানভীর ফুয়াদ রুমি

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১০

প্রথম যেদিন জানতে পারলাম গত বছর প্রকাশিত জননন্দিত বেষ্ট সেলার (আসমান ) উপন্যাসের পর রাখাল আসছে । কিছুটা থমকে গিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম উপন্যাসের নাম রাখাল কেন ? কিন্তু বরাবরের মতো আত্নবিশ্বাসী ছিলাম সেই নব্বই দশকের আলোচিত নাম গীতি কবি লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই পাঠকদের নিরাশ করবেন না।

read more...

যার হাতের কলম থেকে বাংলাদেশের সংগীতের নব্বই দশকে তিন চারশত গান দৈনন্দিন রুটিনের মত আত্নার খোরাক হয়ে আছে শিবলী ভাইয়ের কবিতা ও গান। যিনি শুধু গীতি কবি নন গ্রুপ থিয়েটার নাট্যচক্রে, শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমে তার অবদান অপরিসীম। কমপ্লিট ম্যান খ্যাত সেঞ্চুরি ফেব্রিক্সের দুর্দান্ত সেই জুটি বাঁধা মডেল শিবলী ছিলেন তার সময়ের ফ্যাশন আইকন, সফল নাট্যকার, অভিনেতা, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ব্যান্ড সংগীতের প্রথম একমাত্র গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জনক , নিজের কন্ঠে লেখা সুর কম্পোজিশনে প্রথম এ্যালবাম নিয়ম ভাঙার নিয়ম ও প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পদ্ম পাতার জলের কাহিনী, সংলাপ এবং চিএনাট্য সব তার‌ই সৃষ্টি। স্বভাবজাত বেহেমিয়ান এই মানুষটি সবকিছু থেকে , সবার থেকে আলাদা ও ভিন্ন আমেজের কিছু উপহার দেওয়াই তার প্রধান চরিত্র।
আসলে রাখাল নিয়ে কিছু লেখার মত যোগ্যতা বা সৎ সাহস আমার নেই। রাখাল একটি ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস হলেও এর ধারাবাহিকতা আজো সমাজ থেকে রাষ্ট্রের সব শাখায় প্রতিয়মান ।
পরেম্বশর , একাত্বতাবাদ , সৃষ্টি কর্তা , ইতিহাস, ভালোবাসার পবিত্র শব্দচয়ন, প্রকৃতির নিখুঁত দৃশ্যপট ,জংগলের বাসিন্দাদের অভূতপূর্ব কাব্যিক , সাহিত্যের হৃদয় ছোঁয়া কলম তুলির আঁচড়, ধর্মের অপব্যাখ্যায় মানুষ হত্যা , একজন নারীর মৃত্যু পথ যাত্রী থেকে বেঁচে থাকার সোচ্চার হাতিয়ার , সবকিছু মিলিয়ে ইতিহাস রচিত উপন্যাস হলেও আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ও মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি (রাখাল )। জীবন্ত কিংবদন্তি তার লেখার মুন্সিয়ানায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাসেজ দিয়েছেন রাখাল উপন্যাসে যা সত্যি প্রসংশার দাবীদার। পরিশেষে আমার মত সাহিত্য প্রেমিকদের বলবো লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের উপন্যাস রাখাল আপনাকে অনেক কিছু জানাবে , শেখাবে জীবনের এই দুর্গম পথে ।
বরাবরের মতো রাখাল উপন্যাসে ও পাতায় পাতায় রহস্যময় চমকে আবৃত ।
(জয়তু রাখাল জয়তু শিবলী ভাই)
রাখালের পদচারণায় মুখরিত হোক অমর একুশে বইমেলা। রাখালের বাঁশি বাজে ঐ প্রানের মেলায়।
**** রাখাল উপন্যাস থেকে হৃদয় ছোঁয়া কিছু কথা ***
* অলখ নিরজ্ঞন = অলোখ হলো তাই যা দৃষ্টির অগোচরে আর নিরঞ্জন হলেন তিনি যিনি বিশুদ্ধ নিত্য, অনাদি, অনন্ত, তিনি বক্ষ্ম, বক্ষ্ম‌ই বিশ্ববক্ষ্মান্ডের মূল, তিনি সব বৃত‌ৎ ,তার থেকে বড় কেউ নেই, তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা , তিনি সবকিছুর আঁধার অলখ নিরজ্ঞন।

* মানব জাতির একমাত্র সাধারণ সম্পত্তির নাম সত্য।
* একটু জ্বালা সহ্য করতে পারলেই অনন্ত স্বর্গ।
* প্রতিটি ধর্মের উদ্দেশ্য‌ই এক আর তা হলো মানব জাতির নৈতিক পূর্ণ জাগরণ ঘটানো।
* জঙ্গলে যে কেউ ঢুকতে পারে কিন্তু জঙ্গলের হৃদয়ে সবাই ঢুকতে পারে না।
*অস্থির মনের ঔষধ হলো ধৈর্য।
* বাঘের সাথে লড়তে হয় বলেই ওর নাম সত্য।
* পূর্বা দেবীর জন্য এখন সারা পৃথিবীটাই জঙ্গল।
* ধনীদের প্রধান কৌশলের নাম বিশ্বাসঘাতকতা।
* কখনো কখনো মানুষের নীতি তার জীবনের চাইতেও দামি হয়।
* ধর্মের জন্য মানুষ সৃষ্টি করা হয়নি । বরং মানুষ সৃষ্টি করে তার কল্যাণের জন্য দেওয়া হয়েছে ধর্ম।
এমন অনেক চমকপ্রদ সাহিত্য কথার পরিপূর্ণ উপন্যাস রাখাল । কিছু কথা পাঠকদের উদ্দেশ্যে রাখলাম । রাখাল পড়ুন অন্যকে পড়তে দিন । প্রিয়জন কে রাখাল উপন্যাস উপহার দিন ।
সবশেষে আমার শ্রদ্ধেয় ভালোবাসা লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করি মহান সৃষ্টিকর্তা অলখ নিরজ্ঞন এর কাছে তাকে যেন দীর্ঘ জীবন দান করে দারবিস , দখল, আসমান , রাখালের মত উপন্যাস আমাদের উপহার দিতে পারেন।
অল দ্যা বেষ্ট লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই।

read less

Faruq Hossain Sany

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৯

‘মরতে আমার খুব ভয় লাগে’
– মৃত্যু শয্যায় মানুষের এমন এক সত্য দিয়ে লেখার শুরু।
গল্পের পটভূমি সতীদাহ’র মত ভয়াবহ সামাজিক অজ্ঞতা, ধর্মের গোড়ামিতে নৃশংস ভাবে নারী হত্যা ও সম্পদ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠা নিয়ে।

read more...

নারী- পুরুষের কিছুটা ভাল লাগার অনুভূতি, প্রভুর প্রতি আনুগত্য আর আছে কিছু মানুষের সত্যের পথে সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রানপন চেষ্টা। তথ্য বহুল উপন্যাস।

গল্পের নায়িকা পূর্বার বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুশয্যা থেকে শুরু হয় সতীদাহপ্রথার নিয়মে তাকে স্বামীর চিতায় জীবন্ত পোড়ানোর খেলা। যে মেয়ে টগবগে যৌবনে অতৃপ্ত থাকে অক্ষম স্বামীর আদর- সোহাগ থেকে সেই মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে স্বর্গবাসী হতে চায় তার স্বামী এমনকি বাবা- মা পর্যন্ত। বিশ্বস্ত কাজের মেয়ের সহায়তায় প্রথমবার কোনরকম মৃত্যু কূপ থেকে পূর্বা বেঁচে পালালেও জীবন দিতে হয় কুন্তি নামক বিশ্বস্ত কাজের মেয়ের। গল্পের ভিতর কোন জড়তা ছিল না।

ঠগিদের নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাজা রামমোহন রায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয় আইনের মাধ্যমে। অথচ ভিক্টিম পূর্বা এবং সাক্ষী তার বাবা- মায়ের টিপসই দেয়া দলিল আছে। সেখানে লেখা আছে পূর্বা সেচ্ছায় জ্বলন্ত চিতায় জীবন দান করতে চায়। নিয়তি বলতেও কিছু থাকে কিন্তু কি হবে পূর্বার?- পাঠকের আগ্রহ বাঁচিয়ে রাখাই লেখকের স্বার্থকতা, লেখক পরিপূর্ণ ভাবে এখানে সফল।

রাখাল নামক মুসলিম ধর্মের নায়কের জীবনে প্রেম- নায়িকা এসেও আসেনা। রাখালের জন্য অবশ্যই মায়া লাগতে হবে। রাখালের নায়ক চরিত্র যেন শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ। সত্যিকার অর্থে রাখাল ঠিক নায়ক নয়, একজন উপকারী ও বিশ্বস্ত মানুষ। রাখাল হয়ে রইলো বাস্তব জীবনের সেই পুরনো রাখাল।

অসম্ভব রকমের ভাল লেগেছে বইটি পড়ে। সফল উপন্যাসের পরিপূর্ণ রসদ আছে ‘রাখাল’- এ। ‘দারবিশ’ থেকে শুরু করে ‘দখল’ হয়ে ‘আসমান’ সহ ‘রাখাল’ লেখকের প্রতিটি উপন্যাস অনবদ্য। পড়া শুরু করলে মুহূর্তের জন্যও মন অন্য কোথাও যেতে পারবেনা।

‘সত্যের জন্য বাঁচো সত্যের জন্য মরো’।- মানবিক এই একটি বিশ্বাস বদলে দিতে পারে আমাদের ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা।

যারা পড়তে ভালবাসে তারা যদি এই বইটি না পড়ে তাহলে নিশ্চিত তার পড়ুয়া জীবনে বিন্দুসম হলেও অপূর্ণতা থেকে যাবে।

read less

Saif Shakil

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৮

ভয়ংকর সুন্দর উপন্যাস ‘রাখাল’

আমি একটু শব্দ করেই বলি, ঔপন্যাসিক লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা আমার খুব পছন্দের। পছন্দটা এমনি এমনি নয়। এর বেশ কারণ আছে। গত বইমেলায় প্রকাশিত শিবলীর লেখা আসমান যখন পড়ি তখনই একটা ব্যতিক্রম কিছু আমাকে স্পর্শ করে। আমি টের পাই হৃদয়ের দখিন দুয়ারে বইছে যেন শীতল হাওয়া। উপন্যাসের গহীনে ডুব দিয়ে দেখতে পাই- এ বই শুধু উপন্যাস নয়, আরো উত্তম কিছু!

read more...

শিবলীর লেখা আমাকে টানার কারণ: পলিটিকস, ফিলোসফি, স্পিরিচুয়ালিটি, ইন্সপাইরেশান- এ চারের এক অনন্য সমন্বয়। একেক বইয়ে একেক উপস্থাপনায়, ভিন্ন আঙ্গিকে, নতুন ভাবনার অপূর্ব সন্নিবেশ৷ এসবকিছুর মিশেলই মনের ভেতর একধরনের হাহাকার তৈরী করে। বোধের উন্মেষ ঘটায়। শেখায় দৃঢ়তা, জাগায় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।

সম্ভবত এখানেই লতিফুল শিবলীর বিশেষত্ব। শিল্পীর বৈচিত্র্যময়তা। তুলনায় ব্যতিক্রম!

তাই আসমানের পর লেখকের ‘দারবিশ’ পড়ে নিলাম। আরে এটাও তো দারুণ! তাহলে ‘রাখাল’ কেমন হতে যাচ্ছে?

আমার এ ধারণা একদম সত্যি সত্যি প্রমাণ হয়েছিল। লেখক যখন নিজ মুখ থেকেই এই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

আমাদের এই প্রজন্ম বেশিরভাগ অংশই হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, তাল হারিয়ে বেতাল হয়ে পড়ে। অতঃপর অন্ধকারে… যেন পথ ভুলে যায় তার ফিরে আসার পথ…

লতিফুল ইসলাম শিবলীর উপন্যাসকে এজন্যে আমি তরুণদের জন্য এন্টিবায়োটিক হিসেবে বিবেচনা করি। আসমান, দারবিশ পড়লে আপনারও তাই মনে হতে পারে।

‘রাখাল’ লেখকের ২০২০ বইমেলার প্রকাশিত উপন্যাস। সতীদাহ প্রথার সর্বশেষ ভিক্টিমকে কেন্দ্র করে এটি রচিত।

অন্ধবিশ্বাস মানুষকে মাতাল করে তোলে। বিবেকবোধের দুয়ারে এঁটে দেয় নিঠুর পেরেক। এতে যদি আপনজন তো যাবে যাক, একটা জাতিও যদি ধ্বংস হয়ে যায়, হয়ে যাওয়ার কামনায় উন্মাদ করে তোলে মানুষকে। অন্ধের চর্চা শুধু যে ধর্মে বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেই হয়, তাও না। মুক্তচর্চা আর অজ্ঞেয়বাদের নামেও মানুষ কখনো কখনো অন্ধ হয়ে যায়!

একসময় প্রচলন ছিল- নারীকে তার মৃত স্বামীর সাথে চিতায় পুড়তে হতো। এ কাজকে সর্বাধিক পুন্যের কাজ বলেই যুগযুগ ধরে পুরোহিতরা ধর্মীয় বিধান হিসেবে পালন করিয়ে এনেছে। এমন ভয়ংকর বিধান কি আদৌ ধর্মগ্রন্থে আছে কি না, সাধারণ মানুষ তা মোটেই পরখ করে দেখলো না। ধর্মগুরু নির্ভর মানুষ তাই ভুলকে সঠিক ভেবে পালন করে এসেছে কালের পর কাল!

নিজেদের আদরের কন্যাসন্তানকে তাই জীবন্ত চিতায় অগ্নিদগ্ধ করতে অন্তরটা এতটুকুও কেঁপে ওঠেনা আপন মা-বাবার, কিংবা পরিবারের কারোর!

রাখালেও তাই ঘটেছে। এ দিকে আবার ধর্মীয় এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেগে উঠে একদল। ধর্মের মূল সত্যকে ওরা জনসম্মুখে তুলে ধরে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী ক্ষমতালোভীরা ক্ষমতা আর অর্থ দিয়ে এই সত্যের বিরুদ্ধে সাধারণকে উসকে দেয়। পরিস্থিতিও পালটে যায়। অজ্ঞদের অত্যাচারে নির্মমতার শিকার হয় সত্যবাদীরা। সাময়িকের জন্য ঢাকা পড়ে সত্য।

বৃদ্ধ রামদেব ঘোষালের তরুণী স্ত্রী পূর্বা দেবী। রামদেব ঘোষাল দুনিয়া ত্যাগ করে। পূর্বা দেবীরও তাই সময় হয়েছে চিতায় গমনের…

কুন্তি নামের মেয়েটি পূর্বা দেবীর দাসী। দু’জন প্রায় সমবয়সী। তাই সম্পর্ক গড়ায় বন্ধুত্বে। বন্ধুত্ব থেকে আরো গভীরে। ভেঙে যায় দাসী-মালিক সম্পর্কের অহঙ্কারের দেয়াল!

উগ্র হিন্দু ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠেন রাজা রামমোহন রায়। তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে রামদেব ঘোষালদের গ্রামেরই একজন মাধব চন্দ্র। সংস্কার আন্দোলনে উঠে পড়ে লাগে সে। মাধবের পেছনে লাগে রামদেবের ভাই বাসুদেব। একই গ্রামে দুই মেরুতে দুইদল! মাধব চন্দ্র উচ্চ শিক্ষিত। পড়াশোনা কলকাতায়। বাসুদেব অশিক্ষিত, অথচ ধর্মনিয়ন্ত্রক। তার কথায় উঠবস করেন পুরোহিত অনিল ভট্ট।

আদর্শিক চেতনা, বুকের ভেতর তাকে লালন করা, বেঁচে থাকার সাহসিকতা তবে কি এই ‘রাখাল’-এ নেই?

একপর্যায়ে দেখা মেলে কুখ্যাত ঠগীদের! শুরু থেকে আছে ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট পিটারসন। যেহেতু শাসন চলছিল ইংরেজদের। হাজী শরীয়তউল্লাহ’ও উঠে এসেছেন রাখালে।

ঘটনার টানটান উত্তেজনা, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি পাঠকের নিউরনকে যেমন পাগলাটে করে দেয়, তেমনি জাগিয়ে দেয় অন্তরাত্মাকে!

এ উপন্যাসের নাম ‘রাখাল’ রাখা হলো যে? এ পর্যন্ত কোথাও তো রাখালের কথা আসেনি। তবে কে এই রাখাল? উপন্যাসের মূল চরিত্র কে তাহলে? কুন্তি? পূর্বা দেবী? মাধব চন্দ্র?

রাখালের সন্ধানে ক্যালেন্ডারে আজ:
৪ ডিসেম্বর, ১৮২৯ সাল; ২০ অগ্রহায়ণ, ১২৩৬ বঙ্গাব্দ; ৬ জমাদি উসসানি, ১২৪৫ হিজরি; সোনার হরফে অলঙ্কৃত!

আচ্ছা, এখনো কি কোথাও সতী দাহ হয়? হিন্দুরা কি এখনও এ প্রথায় বিশ্বাস করে? তবে বেদ কি বলে? ভগবদগীতা কি বলে?

‘রাখাল’ তাই ভয়ংকর সুন্দরের এক সবুজ অথচ সাহসী নির্মাণ…

• বইয়ের কিছু কথা না লিখে পারছি না:

• সত্যের জন্য বাঁচো সত্যের জন্য মরো।

• জঙ্গল সাহসীকে সমীহ করে আর দুর্বলকে খেয়ে ফেলে।

• যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় পায়, সেই ব্যক্তিকে মানব-দানব হিংস্র-জানোয়ার, সবাই ভয় পায়। আর যে আল্লাহকে ভয় পায় না সে ব্যক্তি সবকিছুকে ভয় পায়।

• এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই কারণ ছাড়া ঘটে না।

• যতক্ষণ তুমি নিজের সৌন্দর্য টের পাও না, ততক্ষণই তুমি সুন্দর, জেনে গেলে অহংকার তোমাকে কুৎসিত করে দেয়।

• সঙ্গী পেলে পাখি বানায় বাসা, মানুষ বানায় ঘর।

লতিফুল ইসলাম শিবলী; আপনার জন্যে প্রাণভরে দোয়া করি।

read less

Tuhin Mazhar

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৭

একটি নিদারুণ, করুন ও মর্মস্পর্শী ইতিহাস থেকে এই উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় ধারণ করা হয়েছে। “সতী দাহ” এক জঘন্য সামাজিক ব্যাধি ছিলো যা মনে পড়লেই বা কাহিনি শুনলেই গা শিউরে উঠে।

পূর্বা দেবী ঘোষালের চতুর্থ বউ, এক চপলা- চঞ্চলা সদ্য যৌবনা কিশোরী।

read more...

ক্ষয়রোগে আক্রান্ত তার স্বামী যেকোনো সময় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে তার সাথে সাথেই সহমরণে যেতে হবে পূর্বা দেবীকে। সতী দাহ তৎকালীন সমাজে খুবই পূণ্যের কাজ যদি কেউ সহমরণে মারা যায় তার প্রতিমা বানিয়ে পূজা করতো সেই সমাজ এমনকি তার পুড়ে যাওয়া শরীরের ভষ্ম সংগ্রহ করতেন পূন্যের আশায়।

বাসুদেব সম্পর্কে তার দেবর।বাসুদেব তার ভাইকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে, আর পূর্বা দেবীর জন্য বয়ে আনে সেই ঘৃণ্য প্রথা।
প্রথম প্রথম স্বামীর সাথে স্বর্গে অনন্তকাল বসবাসের আশায় সহমরণে যেতে চাইলেও পরবর্তীতে এক অযাচিত ভয়ে অন্তঃসার শূন্যে হয়ে পড়েন তিনি। বাচাঁর নির্মম আকুতি,উপায়ন্তর খুজঁতে গিয়ে ঘটনা চক্রে সাহায্য নিতে হয় বাড়িতে যে রোজ দুধ দিতে আসে সেই রাখালের।

সুঠাম দেহী, এক সৎ মুসলিম রাখালের সাথে পূর্বা দেবীর এক আত্মীক ভালোবাসা গড়ে ওঠে যা ধর্মের অনেক উপরে।

পাঠ- প্রতিক্রিয়াঃ নিঃসন্দেহে বইটির গল্প কথন ও কাহিনী এবং সংলাপ উৎকৃষ্ট।
মাধব চরিত্র টা বেশ সাবলীল ও বুদ্ধিদীপ্ত। রাজা রাম মোহন রায় ও উইলিয়াম বেন্টিংক এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

উপন্যাসটির শব্দচয়ন ও প্রাঞ্জলতা যেকোনো পাঠককে আকৃষ্ট করবেন।

read less

Syeda Fatema

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬

বই রিভিউ আমি লিখতে পারিনা 😅 বই পড়তে ভালোবাসি তাই বই পড়ি। রাখাল বই টা পড়ে মনে হলো এটা নিয়ে কিছু কথা লিখি, তাই লিখতে বসে পড়লাম। মনে হলো এত সুন্দর একটা বই পড়লাম বাকিদের কেনো বিরত রাখবো এমন চমৎকার একটা বই পড়া থেকে?

ঊনিশ শতকের সতীদাহের চিতা থেকে পালিয়ে যাওয়া এক নারীর গল্প এই রাখাল, সম্পত্তির লোভে আর ধর্মের দোহাই দেখিয়ে পূর্বা দেবীকে মেরে ফেলতে চেয়েছে তার দেবর!

read more...

সেই চিতা থেকে পালিয়ে নিজের জীবনকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করে সেই নারী। তার জীবন বাচানো সেই মুসলিম রাখাল কে তার কাছে মনে হয় রাখালের ছদ্মবেশে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ!এই দিকে চারিদিকে পূর্বা দেবীকে খোজার জন্য লোক নিযুক্ত করে দেয়া হয় সাথে সাথেই। কি হবে এরপর? পূর্বা দেবী কি পারবে নিজেকে বাঁচাতে এই কদাকার কুসংস্কার থেকে?? সেই সময়ে রাজা রামমোহন রায় এবং আরো কয়েকজনের উদ্যোগে ব্যাবস্থা করা এই প্রথা নিষিদ্ধের। পূর্বা দেবীকে দিয়েই শেষ হয় এই সতীদাহ প্রথার।

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল একরকম উত্তেজনা! এই বই একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারবেনা কেউ। আমি নিজেই ১০/২০ পেইজ পড়ে উঠে যাওয়ার কথা ভেবে ৭০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছি!!
এক কথায় অসাধারণ একটি বই এই রাখাল। আর সবশেষে বলতে চাই শিবলী ভাইয়ার বই গুলো ভালো লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর এন্ডিং।

ভারতের সর্বশেষ সতীর জীবনের গল্প এই রাখাল।এই গল্পের স্থান সত্য,কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, শুধু কিছু চরিত্র কাল্পনিক। “রাখাল” লেখকের ৪র্থ উপন্যাস।

“Rakhal”
“The Last Victim Of Sati”
“Fiction Based On Fact” ❤

read less

Khadiza Ira

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫

লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলির এই বছর ২০২০-এ প্রকাশিত বইয়ের নাম রাখাল।
মেলা থেকে ফিরেই সংকল্পে আবদ্ধ হলাম বইটি পড়ে শেষ করবো কিন্তু মনে সংশয় ছিলো কত দিনে বইটি শেষ করতে পারবো….অবশেষে পড়া শুরু করেই দিলাম।

read more...

৩০পৃষ্ঠা যাওয়ার পর অনিচ্ছাকৃত ঘন্টাখানেকের একটা বিরতি টানতে হলো- এর পর যে বইটি নিলাম আর শেষ না করে হাত থেকে রাখতেই পারিনি। যেন এক অপরিকল্পিত গহিন এক অজানা কল্পনার ঘোরের মধ্যে ডুবে গেলাম।
“ফিকশন বেজড অন ফ্যাক্ট”
সত্য ঘটনা আর সঠিক ইতিহাস অবিলম্বে লেখা এমন উপন্যাশ খুব কমই আশা করা হয় বর্তমানের উড়তি লেখকদের থেকে।

যদিও লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলি নাইনটিজের পুরাতন সময়ের চেনা কবি হলেও তিনি ২০১৭ থেকে উপন্যাস লেখেন।

সবাই কমবেশি সতিদাহ প্রথার ইতিহাস সম্পর্কে অবগত…এই নির্মম নিষ্করুণ ইতিহাসের সমাপ্তির পেছনে ব্রিটিশ শাসক লর্ড উইলিয়াম সাথে কলকাতার হিন্দু কলেজের সংস্কারপন্থী ছাত্র সংগঠন এবং ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তক রামমোহন রায়ের বিশাল বড় অবদান।

সহিদাহের ইতিহাসে আমৃত স্বর্গলাভের আশায় শত সহস্র নরীর আত্মহুতির ঘটনা ইতিহাসে অনেক উঠে আসে…কিন্তু কয়টি ইতিহাসে উঠে আসে শুধু স্বর্গলাভের আশায় নয় কখনো কখনো পরিবারের সদস্যরা সম্পত্তি গ্রাসের লোভে সহমরনে স্বর্গের লোভ দেখিয়ে সতিদাহের মতো নির্মমতাকে পূজি করে নরহত্যা করার অভিপ্রায়ে হাহাকার হয়ে থাকতো!…
সেই সময়ের ইতিহাসে ঠিক তেমনই একটি ঘটনা যেখানে ঘোষাল মহলের কর্তা পরগমন করার পরে তার যুবতী স্ত্রী পূর্বা দেবিকে আগুনে পুড়ে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পূর্বদেবি জেনে যায়…..তারপর তিনি একটি মুসলিম রাখাল যে কিনা জঙ্গলে-পাহাড়ে-উপত্যকায় বড় বড় মহিষের পাল নিয়ে চষে বেড়ায়, তার সাহায্যে পালিয়ে বেড়ায় জঙ্গলে এবং দীর্ঘ ঈগলের বাসায় দীর্ঘদিন….রাখালের এই অসহায়ে প্রতি সহায়, মহৎ কার্যক্রম এবং জ্ঞানগর্ব কথাবার্তা পূর্বাদেবিকে ভাবাতে শুরু করে এতো কোন সাধারণ মানব নয়, এই তো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ…
অন্যদিকে ঘোষাল মহলে মৃতলাশের গন্ধে পড়ে যায় আহাজারি রোনাজারি…বাসুদেবের আশ্রিত ঠোগিদের কঠোর নির্দেশনা পুর্বাদেবিকে যে কোন মূলে জীবন্ত চিতায় উঠানো চাই….

এক অদ্ভুত উত্তেজনায় রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যেতে পারে। ঘটনা সত্য, কাল সত্য, স্থান সত্য, কিন্তু কিছু কিছু সময়ে একটু কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে।…

এক অসাধারণ উপন্যাস।
সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো। পাচ্ছেন নালন্দা প্যাভিলিয়নে।

read less

Shahariar Nazim

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪

এটি কোন রিভিউ নয়, কারন সে যোগ্যতা আমি রাখি না, পড়ার পর আমার শুধু অনুভুতি।
রাখাল শুধু একটি উপন্যাস নয়, এই সময়ের সবচেয়ে সাহসী একটি পদক্ষেপ। নিজ ধর্মের কেউ যদি তার ধর্ম নিয়ে লেখে তবে তা নিয়ে বিতর্ক হয় না, কিন্তু কেউ যদি এক ধর্মের হয়ে অন্য ধর্মের কোন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখে তবে তার লেখার অধিকার নিয়ে সবাই প্রশ্ন তোলে।

read more...

শিবলী ভাইকে ধন্যবাদ বিষয়টি এতো চমৎকার এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে উপস্থাপন করার জন্য। আমার মনে হয় যারা সনাতন ধর্মের অনুসারী তারা বেশ আন্তরিকভাবেই বিষয়টা নিবেন।

প্রায় দুইশত বছর পূর্বের ঘটনা হলেও তার পাত্র এবং চরিত্র আজও একই রয়ে গেছে। সেই বাসুদেবের মতো নোংরা রাজনীতির লোকেরা আজও ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করছে, এবং তাদের পছন্দের পুরোহিত এই দেশের কাঠ মোল্লারা এখনও মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, দেশাচারের কথা বলে মাজার পূজা এবং অধর্মের বিষয়গুলো ধর্মে টেনে আনছে। অন্য দিকে ধর্মের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার কথা বছরের পর বছর গোপন করে চলছে। তাদের হিনতার কারণে আজ সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
বইটির নাম কেনো রাখাল হলো বা প্রচ্ছদে এই রকম একজন পেশীবহুল মডেলকে কেন নেতা হলো, আমার মনে হয় এই উপন্যাস পড়লে আপনারা জেনে যাবেন।
রাখালের বলা প্রতিটি শব্দ হচ্ছে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি রিমাইন্ডার। তার জীবনবোধ এবং অন্যের জন্য বেঁচে থাকার তাকিদ সবার মনকে ছুয়ে যাবে।
উপন্যাসের সমাপ্তি একেবারে মনের মতো হয়েছে, যদিও রাখালের একাকীত্ব সবসময় মনকে বিষাদময় করে তোলে।
বরাবরের মতো শিবলী ভাইয়ের অসম্ভব লেখনি এই উপন্যাসের প্রাণ, যে কাউকে এটি বিমোহিত করবে।
এই টুকুতে কেন শেষ হলো, মনে হচ্ছিলো আরও বড় দৈর্ঘ্যের উপন্যাস হলে ভালো হতো।বিদ্যা চন্দ্র সাগরের সতীদাহ বন্ধ করা নিয়ে অবদান ছিল বলে জানতাম, সেটা উপন্যাসে আনতে পারলে ভালো হতো।
পরিশেষে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় এই বছরের এটি অন্যতম সেরা উপন্যাস। তাই সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো।
উপন্যাসটি পাওয়া যাবে বইমেলার নালন্দা প্যাভিলিয়ন এ।

read less

Syed Habib Anwar Pasha

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩

‘দ্য ফিকশন বেইজড অন ফ্যাক্ট’, যার প্রতিটা উপন্যাস লেখা হয়, সত্য ঘটনা নিয়ে শুধু চরিত্রগুলো কাল্পনিক। উপন্যাস বলতে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের টানাপোড়েনের টালমাটাল প্রেমের কাহিনি প্রিয়ার হাতে কাচের চুড়ি খোপায় বেলি ফুল, এইসব নিয়ে পাওয়া না পাওয়ার গল্প।

read more...

এই চিরাচরিত গল্প থেকে বের করে, পাঠকদের নতুন করে ভাবতে শেখানো, জীবনে চলার পথে নতুন কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অগ্রণী ভুমিকা রেখে নিজেকে ইতিমধ্যে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, প্রেমে ও বিপ্লবে মাতিয়েছেন নব্বই দশকের তারুণ্য, অনেকেই যে কবি ও কবিতার আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠেছে।

জেল থেকে বলছি, কষ্ট পেতে ভালবাসি, হাসতে দেখ গাইতে দেখ, তুমি আমার প্রথম সকাল, প্যারিসের চিঠি সহ প্রায় চারশো জনপ্রিয় গীতি কবিতার রচয়িতা এবং ২০১৭ বইমেলা থেকে যার শুরু- বেস্ট সেলার ১)দারবিশ,২)দখল,৩) আসমান এবং ৪) রাখাল উপন্যাসের লেখক, লতিফুল ইসলাম শিবলী।

তার প্রতিটি উপন্যাসে জীবনের জন্য প্রচুর ম্যাসেজ থাকে, প্রতিবাদের ভাষা থাকে, ভালবাসার স্পর্শ থাকে; আধ্যাত্মিকতা, রাজনীতির কথা, নতুনভাবে বাঁচার আলো থাকে।

সত্যের জন্য বাঁচো সত্যের জন্য মরো, সত্যের বাণী ছড়িয়ে দিতে তোমার ছড়িয়ে পড়া উচিৎ- এই শক্তিশালী শব্দগুলো লেখা আছে বইয়ের প্রচ্ছদের উপর আর ভেতরে লেখা আছে একজন সত্যবাদী সাহসী রাখালের গল্প। পাশাপাশি পূর্বা দেবীর জীবন যুদ্ধের গল্প, প্রেমের কথা আছে, একেশ্বরবাদের কথা আছে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যুক্তির মাধ্যমে সুন্দর সমাধান আছে, সতিদাহ প্রথার ইতিহাস বদলে যাওয়ার গল্প আছে৷

“রাখাল” এর প্রতিটি চরিত্র অনেক শক্তিশালী, তথ্যসমৃদ্ধ অসম্ভব ভালোলাগার মতো একটা উপন্যাস। নামটা দেখে আমার মনে হয়েছিল এই যুগে গল্পের নাম রাখাল! একটু অবাকই হয়েছিলাম বটে।

কিন্তু পড়ার পর মনে হয়েছে, এই রাখাল আমাদের দেখা রাখাল নয় সম্পুর্ন ভিন্ন এক “রাখাল”। লেখক বরাবরের মতোই ভিন্ন কিছু নিয়ে এসেছেন আমাদের জন্য। আমি মুগ্ধ হয়েছি “রাখাল” পড়ে। অনেক ভালো লেগেছে, আশা করি আমার মতো আপনিও মুগ্ধ হবেন বইটা পড়লে।

শুভকামনা রাখাল এবং লেখকের জন্য।

read less

মোশাররফ হোসেন

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ২

উনিশ শতকের গোড়ার দিকের ঘটনা। কলকাতায় রাজা রামমোহন রায় তখন ধর্ম সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে বর্ণবাদীরা। এমন সময়ে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সতীদাহের চিতা থেকে পালিয়ে গেলেন এক ধনাঢ্য জমিদারের স্ত্রী পূর্বা দেবী। যার পরিবারের লোকেরা যেকোনো মূল্যে তাকে আবার চিতায় তুলতে চায়।

read more...

তাকে খুঁজে বের করতে লেলিয়ে দেওয়া হলো সেই সময়ের ভয়ংকর খুনি লুটেরা ঠগীদের।
বইটি পড়তে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেলাম। সতীদাহ! একালের ঔপন্যাসিকরা আবার এসব ঐতিহাসিক এবং জটিল বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করল কবে? এসব তো সুনীল-সমরেশদের ব্যাপার-স্যাপার। লেখকের সাহসের প্রশংসা করতে হয়। লেখকের সব বইয়েই লেখা থাকে The fiction based on fact । এখানে সত্যের সাথে ইতিহাসের গন্ধ পেলাম। পূর্বা দেবী, বাসুদেব, অনিল ভট্ট, মাধব, বাহরাম জমাদার – এই চরিত্রগুলো এক টানে উনিশ শতকের প্রথম দিকে নিয়ে গেল। সতীদাহের এই ভয়ংকার সামাজিক গল্পটি মাঝপথে এসে এডভেঞ্চারে মোড় নিয়েছে। চোখের সামনে ভেসে উঠল তরাই জঙ্গল, পাহাড়, সুবিশাল ছাতিম গাছ। সেই এডভেঞ্চারের নায়ক একজন রাখাল। হিন্দু বিধবা পূর্বা দেবী আর মুসলমান রাখালের ভাগ্য তবে কী একই সুতোয় গাঁথা! কিন্ত বনচারী রাখাল যে ইশ্বরের দূত। সে সবার, আবার কারোরই নয়।
লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলীর দারবিশ, দখল, আর আসমান পড়ার পর এই বইমেলায় আমার বই কেনার তালিকার সবচেয়ে উপরে ছিল রাখাল। লেখক নিরাশ করেননি। পড়ুন সেই সময়ের গল্প এই সময়ের সহজ সরল ভাষায়।
বইয়ের নাম – রাখাল

read less

Upoma Talukder

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১

লেখক না লেখা, কি দিয়ে শুরু করবো ঘোরে ছিলাম। নব্বই দশকে যার পথচলা শুরু সেই থেকেই আমি তার ভক্ত ছিলাম পরিচয়টাও তখন থেকেই। খুব কাছ থেকে দেখেছি জেনেছি তাকে। তার লেখা এতো শক্তিশালী সেইসময় অসম্ভব সুন্দর অনেক গান ও কবিতা উপহার দিয়েছে। বরাবরই সে ভিন্ন কিছু করতে ভালোবাসে এইটা প্রথম পেলাম আবারও রাখাল- উপন্যাস পড়ে।

read more...

হ্যাঁ এতক্ষণ বলছিলাম আমার প্রিয় বন্ধু, লতিফুল ইসলাম শিবলীর কথা। তার একেকটা গান যেমন জীবনের কথা বলে, ঠিক প্রতিটা উপন্যাস এর গল্পও জীবনের চেয়েও বড় – এইটা জেনেছিলাম “আসমান” পড়ে। “দখল” – পড়ে জেনেছিলাম ক্ষমা করতে ক্ষমতা লাগে, প্রথম বই “দারবিশ” – পড়ে জেনেছি উপন্যাস এমনটা হতে পারে। চারটা বই পড়ে এতো মুগ্ধ হয়েছি আর ভেবেছি, সে সবার চেয়ে আলাদা কিছু লিখেছে পাঠকের জন্য।
দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষায় থেকেছি কবির নতুন বই “রাখাল” পড়ার জন্য। সেই অপেক্ষা সার্থক হয়েছে আমার। শেষ পাতা পড়ে প্রান খুলে দোয়া করেছি বন্ধুর জন্য। তুমি সফল একজন লেখক, খুব জনতে ইচ্ছা করছে কিভাবে লিখো এতো সুন্দর করে। জীবনে অনেক গল্পের বই পড়েছি কিন্তু তুমি আমার মতো অন্যদেরকেও মুগ্ধ করে ফেলেছো। অনেক ইন্টারভিউ এ দেখেছি তোমাকে উনারা কথার ‘জাদুকর’ বলে আবারও প্রমান পেলাম সেটা।
প্রতিটা গল্পে অসংখ্য মেসেজ থাকে জীবনকে বদলে দেওয়ার মতো, তেমনি এতো সুন্দর পরিস্কার ভাষা অযথা টেনে টেনে গল্প বড় না করা এইগুলা একধরনের সম্মান করা পাঠককে। রাখালে ডুবে ছিলাম, ভীষন মায়া হয়েছে রাখালের জন্য। উপরে ছবি দেখে আর বইটা পড়ে মনে হয়েছে অনেক যত্ন আর ভালবাসায় তৈরি করেছ এই রাখাল; ভীষন লাজুক। আমি যদি তোমার বইয়ের গল্পের কথা বলতে যাই তাহলে দুইটা বই লিখতে হবে আমাকে, এক কথায় বললাম অসম্ভব সুন্দর একটা বই মনে থাকবে এবং অন্যকে বলতে পারবো এই বইটা পড়ার জন্য। তোমার জন্য প্রান খুলে দোয়া সুস্থ আর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। অনেক দাবি তোমার কাছে এই প্রজন্মের জন্য এইরকম আরও হাজারটা বই লিখবে ইনশাল্লাহ।

read less

Shamima Hossain

Article link


Related posts